চীনের কিছু অঞ্চলে কোভিড সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন সময় নতুন করে লকডাউন জারি করা হয়েছে। ফলে উৎপাদন কার্যক্রম প্রভাবিত হচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির যন্ত্রাংশ প্রস্তুত কারখানাগুলোয়, যার প্রভাব পড়ছে দেশটির অর্থনীতির স্বাভাবিক গতিশীলতায়। এরই ধারাবাহিকতায় অক্টোবরে অপ্রত্যাশিতভাবে সংকুচিত হয়েছে চীনের রফতানি ও আমদানি বাণিজ্য।
২০২০ সালের মে মাসের পর আর এমন সংকোচনের মুখোমুখি হয়নি দেশটি। কোভিডের অভিঘাত বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা হ্রাসের ঝুঁকি সৃষ্টির পাশাপাশি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের লড়াইকে মন্থর করছে। চীনের নীতিনির্ধারকদের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে রফতানি ও আমদানি বাণিজ্য সংকোচনের তথ্যটি। একদিকে তারা দেশের অভ্যন্তরে কোভিডের সংক্রমণ রোধে ব্যস্ত। অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, বিশ্বব্যাপী সুদের হার বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতি সামলাতেও তারা এখন অনেকাংশেই হিমশিম খাচ্ছেন।
সেপ্টেম্বরের ৫ দশমিক ৭ শতাংশ লাভ থেকে একলাফে নেমে অক্টোবরে দেশটির বহির্গামী চালান এক বছর আগের তুলনায় শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়। তাছাড়া দেশটির অফিশিয়াল তথ্যানুসারে দেখা যায়, বিশ্লেষকদের ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধির যে প্রত্যাশা করেছিলেন তাও অর্জিত হয়েছে। ২০২০ সালের মে মাসের পর দেশটি এর আগে এত বড় বাণিজ্য সংকোচনের মুখোমুখি হয়নি।
প্রাপ্ত তথ্যটি এটাই ইঙ্গিত করে যে, চাহিদা সামগ্রিকভাবে দুর্বল রয়ে গেছে এবং বিশ্লেষকরা আগামী প্রান্তিকে রফতানিকারকদের জন্য আরো খারাপ সংবাদ আসতে পারে বলে সতর্ক করেছেন। ক্রমাগত কোভিড-১৯ বিষয়ক নিষেধাজ্ঞা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ অর্থনীতির উৎপাদন খাতের ওপর অনেক বেশি চাপ তৈরি করেছে। তাছাড়া চীনা রফতানিকারকরা এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ইউয়ানের দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতা ও বছর শেষের কেনাকাটার মৌসুম ঘিরে বিশ্বব্যাপী ভোক্তা ও ব্যবসার জন্য বিস্তৃত সুযোগগুলোকেও উপলব্ধি করতে সক্ষম হননি।
বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি পিনপয়েন্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ ঝিওয়েই ঝাং বলেন, রফতানির দুর্বল প্রবৃদ্ধি সম্ভবত কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে দুর্বল বাহ্যিক চাহিদার পাশাপাশি সরবরাহের ব্যাঘাতকেও প্রতিফলিত করে। এ সময় তিনি অ্যাপল যন্ত্রাংশের অন্যতম সরবরাহকারী ফক্সকন কারখানায় কভিড-সংক্রান্ত বিধিনিষেধের জের ধরে উৎপাদনস্বল্পতার বিষয়টিও উল্লেখ করেন। অ্যাপল ইনকরপোরেটেডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চীনের ঝেংঝুতে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তারা উৎপাদন হ্রাসের আশঙ্কা করছে। তাই আগের প্রত্যাশার তুলনায় আইফোন ১৪ প্রো এবং আইফোন প্রো ম্যাক্সের কম শিপমেন্ট আশা করছে।
ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ জিচুন হুয়াং মনে করেন, আসছে প্রান্তিকে চীনের রফতানি আরো হ্রাস পাবে। আমরা আরো মনে করছি আগ্রাসী আর্থিক কঠোরতা ও প্রকৃত আয়ের ওপর উচ্চমূল্যস্ফীতির প্রভাব আগামী বছর বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে। প্রায় তিন বছর ধরে চীন কঠোর কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ নীতিতে আটকে আছে, যা বড় ধরনের অর্থনৈতিক অভিঘাত, ব্যাপক হতাশা ও ক্লান্তির কারণও হয়ে উঠেছে বলে অনেকে মনে করছেন।
এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়েই উচ্চমূল্যস্ফীতির ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়েছে, যা একই সঙ্গে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা যোগ করেছে ও ব্যবসায়িক কার্যকলাপের গতিকে মন্থর করেছে। এর মধ্যে অক্টোবরের লকডাউনের ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়ার মাধ্যমে চীনের আমদানিকারকরাও নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।