জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সৌন্দর্যের সুনাম রয়েছে পুরো দেশব্যাপী। সবুজ বনভূমি, নানা রকম প্রাণি, ছোট বড় লেক, বাহারি রকমের ফুল, লাল ইটের তৈরি বৈচিত্র্যময় এ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য দেখতে ছুটে আসেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
জাবিতে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২৬টি লেক আছে। প্রতিবছর নভেম্বর মাসে হিমালয়ের উত্তরে অবস্থিত শীত প্রধান দেশগুলোর প্রচন্ড শীত ও ভারি তুষারপাতে টিকতে না পেরে পরিযায়ী পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে ছুটে আসে লেকগুলোতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সূত্র অনুসারে ১৯৮৬ সাল থেকে এখানে অতিথি পাখি আসা শুরু করে। ১২৬ প্রজাতির দেশীয় ও ৬৯ বিদেশি প্রজাতি মিলিয়ে ১৯৫ প্রজাতির পাখি এসেছে লেকগুলোতে। শীতের সময় পাখির কলরবে মুখরিত থাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলো। সরালি, পান্তামুখী, জলপিপি, নর্থগিরিয়া, কালিম, ডাহুক, হট্টিটি, রঙ্গিলা চ্যাগা, পাতিবাটান, শামুক খোলসহ বিভিন্ন ধরনের পাখির আসর জমে এখানে।
অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে ২০১৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার। তবে কয়েকবছর থেকে জাবির এ লেকগুলো নানা অব্যবস্থাপনায় অতিথি পাখির বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঘাস, কচুরিপানা, আবর্জনায় ভরে যাওয়ায় মাছসহ নানারকম জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। দর্শনার্থীরা কাগজ, পলিথিন, প্লাস্টিক প্লেট, গ্লাস, খাবারের বক্স ফেলে যাচ্ছেন লেকের পাড়েই, এতে দূষিত হচ্ছে ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ। লেকের ময়লা পানিতে বংশবিস্তার করছে মশা। প্রশাসনের অবহেলার কারণেই লেকের এই সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৯ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সুস্মিতা বিন্তী বলেন, জাবির লেকগুলোতে পাখি কমে যাচ্ছে কারণ আমরা তাদের বাস উপযোগী প্রতিবেশ দিতে পারছি না। লেকগুলো ইজারা দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে, ব্যবসায়িকভাবে তারা সেখানে নিয়মিত মাছ চাষের জন্য লেকগুলো তৈরি করছে পরিবর্তন-পরিবর্ধন করছে। যার কারণে প্রাকৃতিক যে প্রতিবেশ তা নষ্ট হচ্ছে এবং মানুষের আনাগোনার বাড়ায় পাখি আসছে না। এছাড়া জাবি ক্যাম্পাসে ছুটির দিন সহ প্রায় প্রতিদিনই অতিরিক্ত মানুষের আনাগোনা হচ্ছে, শব্দ দূষণ হচ্ছে, দর্শনার্থীরা পাখির ঝাক দর্শন করতে ঢিল ছুড়ে। ফলে অতিথি পাখি আসছে না।
এবিষয়ে পাখি বিশেষজ্ঞ ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, এ মাসের শেষের দিক থেকে পাখি আসা শুরু হবে। পাখিরা নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ করে। পাখি আসা কমে যাওয়ার কারণ তাদের বিরক্ত করা হয়। ক্যাম্পাসে লোকজনের চলাচল অনেক বেশি। বিশেষ করে শুক্র-শনিবার ক্যাম্পাসে প্রচুর টুরিষ্ট আসে এবং লেকের পাড়ে ভিড় করে ফলে পাখিরা বিরক্ত হয়ে চলে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (এস্টেট শাখা)মোহাম্মদ আজীম উদ্দিন বলেন, ঘাস কচুরিপানা প্রত্যেক লেকে ভর্তি ছিল আমরা পরিস্কারের জন্য উদ্যোগ নিয়েছি, পর্যায়ক্রমে সবগুলো লেক পরিস্কার করবো।
লেকের পাড়ে দোকান ও হকারের বিষয়ে তিনি বলেন, ট্রান্সপোর্ট ও টারজান পয়েন্ট ছাড়া কোথাও অনুমতি নাই। এগুলোকে আমরা বারবার তাড়িয়ে দিই, আবার চলে আসে। তবে দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না তারা লেকের পাড়ে ভিড় করে। আমরা একটি শাখা মাত্র সরাসরি উদ্যোগ নিতে পারি না। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া দেননি তিনি।