হাওর অঞ্চলের সংস্কৃতিচর্চা বিকশিত করতে ২০০১ সালে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় হবিগঞ্জ কিবরিয়া পৌর মিলনায়তন। যা তৎকালিন সময়ে ছিল দেশের অন্যতম বড় এবং আধুনিক মিলিনায়তন। হলের ভেতরে ছিলো সু-বিশাল মঞ্চ এবং একসাথে সাড়ে ৬শ’ মানুষের বসার সিট। শিল্পীদের জন্য ছিল আলাদা আলাদা ড্রয়িং রুম, ড্রেসিং রুম, রিয়ারসেল রুম ও মেকাপ রুম। ছিল সেন্ট্রাল এসির ব্যবস্থা। সাউন্ড ইনস্টলমেন্ট এবং আলোকবাতিসহ যাবতীয় যন্ত্রাংশ আনা হলেছিল আমেরিকা এবং সিঙ্গাপুর থেকে।
২০০১ সালের ২৪ মার্চ কিবরিয়া পৌর অডিটোরিয়ামের উদ্বোধন করেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী শাহ্ এএমএস কিবরিয়া। উদ্বোধনের পর অডিটোরিয়ামটি হবিগঞ্জ পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করে নির্মাণকারী সংস্থা এলজিইডি। এরপর থেকে এটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে পৌরসভা। কিন্তু মাত্র কয়েক বছর এটি চালু থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও উদতাসিনতার কারণে ২০১২ সালের দিকে অডিটরিয়ামটি বন্ধ হয়ে যায়।
দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এই অডিটোরিয়ামটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ না করায় সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে কোটি কোটি টাকার এসি, সাউন্ড ইনস্টলমেন্ট, আলোকবাতি, মঞ্চ, চেয়ার-টেবিলসহ যাবতীয় সরঞ্জামাদি। প্রবেশের দরজাগুলো খেয়ে ফেলেছে উইপোকা। এতে ক্ষুব্ধ ও ভারাক্রান্ত জেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
জেলা ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদ ইসলাম বলেন, ‘হবিগঞ্জে ভালো কোন অডিটরিয়াম নেই। বর্তমানে আমাদের যে কোন অনুষ্ঠান করতে হয় শহরের টাউন হলে। সেখানে যেমন বেশি মানুষের ধারণ ক্ষমতা নেই, তেমনি নেই পার্কিং ব্যবস্থা। সেই সাথে শহরে যানজটের সৃষ্টি হয়।’
তিনি বলেন, ‘কিবরিয়া অডিটরিয়ামটি অনেক বড়। এখানে এক সাথে হাজার মানুষ নিয়ে যে কোন অনুষ্ঠান করা যেতো। আমরা ছাত্রলীগের বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান এখানে করেছি। কিন্তু অজানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে এটি বন্ধ রয়েছে।’
হবিগঞ্জ ব্যবসায়ি কল্যাণ সমিতি (ব্যাকস্) এর সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘কিবরিয়া অডিটরিয়ামটি বিশাল বড় এবং খুবই আধুনিক ছিল। এখানে যে কোন বড় অনুষ্ঠান করা যেতো। যেমন মনোরম পরিবেশ ছিল, তেমনি সব ধরণের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ছিল। কিন্তু অদৃশ্য কারণে এটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। যেটি আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। আমরা চাই এটি দ্রুত সংস্কার করে আবারো উন্মোক্ত করে দেয়া হোক।’
সাংস্কৃতিক কর্মী সিদ্দিকী হারুন বলেন, ‘কিবরিয়া অডিটারিয়াম চালুর পর জেলা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নতুন ধারা যুক্ত হয়েছিল। গতি পেয়েছিল সংস্কৃতিচর্চা। কিন্তু এটি বন্ধের পর ঝিমিয়ে পড়েছে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমরা শিল্পকলায় যে কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করি। কিন্তু এখানে ভাড়া বেশি এবং ভালো সুবিধাও নেই। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাবো দ্রুত এটিকে সংস্কারের মাধ্যমে চালু করে স্বল্পভাড়ায় সংস্কৃতিক চর্চার ব্যবস্থা করে দেয়া হোক।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এই অডিটরিয়ামটি যখন নির্মাণ হয় তখন আমি পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলাম। এটি ছিল বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম বড় এবং আধুনিক অডিটরিয়াম। এখানে সেন্ট্রাল এসির ব্যবস্থা ছিল। এছাড়া সাউন্ড ইনস্টলমেন্ট, আলোকবাতিসহ যাবতীয় সরঞ্জামাদি আনা হয়েছিল আমেরিকা এবং সিঙ্গাপুর থেকে।’
তিনি বলেন, ‘শুরু কয়েক বছর এটি চালু ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে যে বা যারা পৌরসভার দায়িত্বে এসেছেন তারা এটিকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারেননি। যে কারণে এটি বন্ধ হয়ে যায়। আমরা চাই বর্তমান পৌর পরিষদ এটি আবার সংস্কার করে চালু করবে।’
দীর্ঘদিন পরিত্যাক্ত থাকার কারণে অপরাধিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয় অডিটরিয়ামটি। তবে বছরখানেক ধরে এটিকে ডাম্পিং হিসেবে ব্যবহার করছে হবিগঞ্জ পৌরসভা। রাখা হচ্ছে পৌরসভার গাড়িসহ নানা সরঞ্জামাদি। সেই সাথে নিয়োগ দেয়া হয়েছে দু’জন নিরাপত্তাকর্মী।
হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম বলেন, ‘এইর মধ্যে অডিটরিয়ামটি সংস্কার করে চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমি মন্ত্রণালয়ের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলছি। তারাও আমাকে আশ্বস্ত করেছেন আমাকে এটি অনুদান দেবেন।’
তিনি বলেন, তৎকালিন সময় এটি ৫ কোটি টাকায় নির্মাণ হলেও জায়গা এবং আনুষাঙ্গীক বিষয় মিলিয়ে বর্তমানে এটির ভ্যালো হবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। তবে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চুক্তিভিত্তিকভাবে এটিকে সংস্কার ও পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চাইলে সেই সুযোগও আছে।’