মুমিন বান্দা
পাপ থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু পাপের অনুকূল পরিবেশ, অসৎ সঙ্গের প্রভাব ও
শয়তানের সার্বক্ষণিক প্ররোচনায় পাপমুক্ত থাকা সম্ভব হয় না। যদি কোরআন-সুন্নাহর আলোকে
কিছু উপায় অবলম্বন করা যায়, তাহলে অধিক পাপাচারে লিপ্ত হওয়া থেকে বাঁচা যেতে পারে।
আসুন জেনে নিই,
পাপ বর্জনের কয়েকটি উপায় ও পন্থা:-
* পাপকে ছোট বা
তুচ্ছ জ্ঞান না করা
পাপ যেমনই হোক,
তা পাপই। তাকে ছোট মনে করে তা করে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিটি পাপই আমলনামায় লেখা
হয়। সুতরাং পরকালীন শাস্তির কথা ভেবে ক্ষুদ্র পাপ থেকেও বিরত থাকা উচিত। রাসুল (সা.)
আয়েশা (রা.)-কে বলেছেন, ‘হে আয়েশা! তুমি
ছোট ছোট গুনাহ থেকেও নিজেকে রক্ষা করো। কেননা সেটা লেখার জন্যও আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন
ফেরেশতা নিযুক্ত আছেন। ’ (মিশকাত, হাদিস
: ৫৩৫৬)
* ভালো মানুষের
সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন
মানুষের পাপ কাজে
অসৎ সঙ্গীদের সহায়তা ও প্রভাব থাকে। তাই পাপ থেকে বেঁচে থাকতে সৎ ও ভালো মানুষের সঙ্গে
সম্পর্ক স্থাপন করা উচিত। মহানবী (সা.) ভালো মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘তুমি মুমিন ব্যক্তি
ছাড়া অন্য কারো সঙ্গী হবে না এবং তোমার খাদ্য যেন পরহেজগার লোকে খায়। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৩২)
* পাপ প্রকাশ
না করা
যেকোনো পাপ আল্লাহর
অবাধ্যতার শামিল। পরম ক্ষমাশীল আল্লাহ তাআলা বান্দার পাপ গোপন রেখে তা ক্ষমা করে দিতে
পারেন। কিন্তু বান্দা নিজে তা প্রকাশ করলে ওই বান্দাকে আল্লাহ ক্ষমা করেন না। রাসুল
(সা.) বলেছেন, ‘আমার সব উম্মতকে
মাফ করা হবে, তবে প্রকাশকারী এর ব্যতিক্রম। আর নিশ্চয়ই এটা বড়ই অন্যায় যে কোনো লোক
রাতের বেলা অপরাধ করল, যা আল্লাহ গোপন রেখেছেন। কিন্তু সে সকালে বলে বেড়াতে লাগল, হে
অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটাল যে আল্লাহ তার কর্ম
লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার ওপর আল্লাহর দেওয়া আবরণ খুলে ফেলল। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৬৯)
* পাপের পর নেকির
কাজ করা
শয়তানের প্ররোচনায়
পাপ হয়ে গেলে অনুশোচনার পরপরই কোনো নেকির কাজ করা উচিত। কারণ নেকি পাপ মিটিয়ে দেয়।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই সৎ কর্মসমূহ
মন্দ কর্মসমূহকে বিদূরিত করে। ’ (সুরা : হুদ,
আয়াত : ১১৪)
* তাওবা-ইস্তিগফারের
অভ্যাস গড়ে তোলা
শয়তানের প্ররোচনায়
যতবার পাপ হবে, ততবারই তাওবা করা উচিত। কারণ শয়তান চায় না কোনো বান্দা ক্ষমা পেয়ে যাক।
তাই পাপ থেকে মুক্ত থাকার জন্য বারবার তাওবা করার অভ্যাস করে নিতে হবে। হাদিসে কুদসিতে
আছে, ‘হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহর পরিমাণ যদি
আসমানের কিনারা বা মেঘমালা পর্যন্তও পৌঁছে যায়, তারপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা
করো, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, এতে আমি পরোয়া করব না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি সম্পূর্ণ
পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়েও আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কাউকে অংশীদার না করে থাকো,
তাহলে তোমার কাছে আমি পৃথিবীপূর্ণ ক্ষমা নিয়ে হাজির হব। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪০)
মহান আল্লাহ আমাদের
পাপমুক্ত জীবনযাপনের তাওফিক দান করুন।