শান্তিপূর্ণ ও
সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়া গড়তে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ও নীতি-নির্ধারকদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ
করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার
সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বুধবার (২৩ মার্চ) রাজধানীর প্যারেড স্কয়ারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে
একথা বলেন তিনি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ‘মুজিব চিরন্তন’ শীর্ষক মূল প্রতিপাদ্যের দশ দিনব্যাপী
অনুষ্ঠানমালার ৮ম দিনের (২৪ মার্চ ২০২১) অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ‘শান্তি, মুক্তি
ও মানবতার অগ্রদূত।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত
অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত
ছিলেন, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা।
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের এই
শুভ মুহূর্তে আমি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক নেতা এবং নীতি-নির্ধারকদের প্রতি একটি শান্তিপূর্ণ
সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা
বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষের বসবাস। এ অঞ্চলে যেমন সমস্যা
রয়েছে, তেমনি রয়েছে প্রচুর সম্ভাবনা। আমাদের এ অঞ্চলের মানুষের রয়েছে অসম্ভব প্রাণশক্তি,
উদ্ভাবন ক্ষমতা এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে জয় করে টিকে থাকার দক্ষতা।
পারস্পরিক সহযোগিতার
ভিত্তিতে প্রাপ্ত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আমরা সহজেই দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন
ঘটাতে পারি। আমরা যদি আমাদের জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করি, তাহলে
অবশ্যই দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।
শেখ হাসিনা বলেন,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যই লড়াই
করেননি। তিনি বিশ্বের সব নিপীড়িত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখতেন। তিনি শান্তিপূর্ণ
সহ-অবস্থান এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন পারস্পরিক
সহযোগিতার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
বঙ্গলাদেশকে এগিয়ে
নেওয়ার প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আমরা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা
প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে
উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম
আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু
করে দাঁড়াবে- আমরা সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি।
ভুটানের সঙ্গে
বাংলাদেশের সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ভুটান আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ
প্রতিবেশী বন্ধু-রাষ্ট্র। ভৌগোলিক নৈকট্য ছাড়াও আমাদের রয়েছে প্রায় একই ধরনের ইতিহাস
ও ঐতিহ্য। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের অবস্থান প্রায় এক এবং অভিন্ন।
মুক্তিযুদ্ধের
সময় বাংলাদেশকে সহযোগিতার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে আমাদের মহান
মুক্তিযুদ্ধে ভুটানের প্রয়াত মহামান্য তৃতীয় রাজা জিগমে দোর্জি ওয়াংচুক এবং সেদেশের
জনগণ স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের শুধু সমর্থনই দেননি, সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
ভুটানের তরুণেরা ভারতের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আহত এবং অসুস্থ
বাঙালি শরণার্থীদের সেবা করেছিলেন।
বাংলাদেশকে প্রথম
স্বীকৃতি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ভুটানই প্রথম দেশ যে স্বাধীন বাংলাদেশকে
সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়লাভের আগেই ৬ ডিসেম্বর
ভুটান বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। আমরা ভুটানের জনগণের সে অবদানের কথা কৃতজ্ঞতাভরে
স্মরণ করি।
বাংলাদেশের মহান
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১২ সালে ভুটানের তৃতীয় রাজা জিগমে দোর্জি ওয়াংচুককে
‘বাংলাদেশ লিবারেশন
ওয়ার’ সম্মাননায় ভূষিত করার কথা উল্লেখ করেন
তিনি।