রাজবাড়ীতে পদ্মার পানি বেড়েই চলেছে। এতে নিম্নাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ছে। ফলে পানিবন্দি মানুষদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শনিবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ীর তিনটি গেজ স্টেশন পয়েন্টের পদ্মার পানি বেড়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এতে
জেলার ৫টি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ৬৭টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিম্নাঞ্চলের এক হাজার ৪৫ হেক্টর ফসলি জমি। শনিবার সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)ও কৃষি সম্প্রসারণ
অধিদপ্তর অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, সকাল ৬টায় পরিমাপ
করা তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ীর তিনটি পয়েন্টের পদ্মার পানি বেড়ে বিপৎসীমার
ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চলের এক হাজার ৪৫ হেক্টর
ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে নষ্ট হচ্ছে রোপা আমন, রোপা আউশ, আগাম সবজি, আখ বীজতলা
ও বাদামসহ বিভিন্ন ফসল।
এছাড়াও পদ্মার পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে
অভ্যন্তরীণ গড়াই, হড়াই চন্দনা ও চিত্রা নদীর পানিও বাড়ছে। পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে চরাঞ্চলের
১৩টি ইউনিয়নের ৬৭টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ প্লাবিত হয়েছে। বসতবাড়িতে পানি ওঠায় চরম
দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যাকবলিতরা।
এদিকে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজবাড়ী
সদর উপজেলার মিজানপুর, বরাট, খানগঞ্জ, পাংশা উপজেলার হাবাসপুর, বাহাদুরপুর, সেনগ্রাম,
কালুখালী উপজেলার কালিকাপুর, রতনদিয়া, হরিণাবাড়িয়ার চর, গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম
ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন।
শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, শিশু খাদ্য,
ওষুধসহ গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে নানা সমস্যা
দেখা দিয়েছে। এতে মানুষ সারাদিন পানির মধ্যে অবস্থান করায় ঘা-পাঁচড়া দেখা দিতে শুরু
হয়েছে। বাথরুম তলিয়ে যাওয়ায় নারীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
অন্যদিকে পানি বাড়ায় জেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাটসহ
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা রাজবাড়ী সদরের গোদারবাজার, চর সেলিমপুর, গোয়ালন্দের দেবগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ
অবস্থায় রয়েছে। সরকার থেকে মাত্র ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায়
একেবারে নগণ্য।
কালিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান
ও কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আতিউর রহমান নবাব জানান, আমার ইউনিয়নের
প্রায় অর্ধেক এলাকা বন্যায় তলিয়ে গেছে। তালিকা করে তাদের ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।
দেবগ্রাম ইউনিয়নের চরবরাটের বাসিন্দা জমির
আলী জানান, তার গ্রামের ২০০ বাড়ি এখন বন্যার পানি নিচে। রান্নাঘর তলিয়ে যাওয়ায় সময়মতো
রান্না না করায় খেয়ে না খেয়ে দিনপার করছে অনেকে। শুকনো খাবার, শিশু খাবার ও বিশুদ্ধ
পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুল হক বলেন, জেলার ১৩টি ইউনিয়নের ৬৭টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। ইতোমধ্যে ৫টি উপজেলায় ২১৩ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসের মাধ্যমে চাহিদা পেলে আরও বরাদ্দ দেয়া হবে।