সরকারি কর্মচারীদেরও সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির
(স্কিম) আওতায় আনা হবে। এমনকি স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরাও
এই কর্মসূচির আওতায় আসবেন। এ বিষয়ে সরকার সুবিধামতো সময়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রজ্ঞাপন
জারি করবে। সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির উদ্বোধনের দিন বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) এক বিজ্ঞপ্তিতে
এমন ঘোষণা দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,
দেশের প্রায় ১০ কোটি মানুষকে পেনশন সুবিধার আওতায় আনতে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু
করা হয়। দেশের সর্বস্তরের জনগণকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামোর আওতায়
আনাই এ কর্মসূচি চালুর উদ্দেশ্য।
চারটি আলাদা স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন–ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয়েছে। এর স্কিম বা কর্মসূচিগুলো হচ্ছে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা। এর মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য প্রবাস স্কিম; বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য প্রগতি; রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সমতা স্কিম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছয়টির মধ্যে চারটি স্কিম চালু করা হয়েছে। বাকি দুটি পরে চালু করা হবে। অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, যে দুটি পরে চালু করা হবে, তার মধ্যে রয়েছে শ্রমিক শ্রেণির জন্য একটি, শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যটি। তবে একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে বলা হতে পারে যে ২০৩৫ বা ২০৪১ সাল থেকে সরকারি কর্মচারী এবং স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্যও সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উন্মুক্ত হবে।
এ সম্পর্কে সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ জানান, তিনি অর্থসচিব থাকাকালে প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নির্দেশনায় সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালুর ব্যাপারে প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত এটা চালু হওয়ায় তিনি খুশি। মাহবুব আহমেদ বলেন, মাত্র তো শুরু হলো। এর অনেক উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। আর সরকারি কর্মচারীদের জন্যও সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন>> যেভাবে সর্বজনীন পেনশন রেজিস্ট্রেশন করবেন
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,
চালু হওয়ার পর থেকে দেশে ও বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া
পাওয়া যাচ্ছে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল এক হাজারের বেশি মানুষ
পেনশনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য নিবন্ধিত হয়েছেন। অনেকে আবার চেষ্টা করেও পারেননি।
অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, বর্তমানে গড় আয়ু
৭২ দশমিক ৩ বছর হলেও ভবিষ্যতে তা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর বাংলাদেশ বর্তমানে
জনমিতিক লভ্যাংশের আওতায় আছে এবং মোট জনসংখ্যার ৬২ শতাংশই কর্মক্ষম। গড় আয়ু বৃদ্ধি
ও একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধিজনিত কারণে ভবিষ্যতে নির্ভরশীলতার হার বাড়বে। ফলে একটি
টেকসই সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সর্বজনীন পেনশন
কর্মসূচিতে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী একজন সুবিধাভোগী বয়স ৬০ বছর হওয়া পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের
বেশি বয়স্ক একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা দেওয়া সাপেক্ষে আজীবন পেনশন সুবিধা
পাবেন।
বলা হয়, পেনশনে থাকাকালে ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ
হওয়ার আগে মৃত্যুবরণ করলে ওই পেনশনারের নমিনি ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার বাকি সময় পর্যন্ত
পেনশন পাবেন। চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগেই মারা গেলে তাঁর জমাকৃত অর্থ
মুনাফাসহ নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।
এ ছাড়া চাঁদাদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে
কেবল তাঁর জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে নেওয়া যাবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত
চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াত দেওয়া হবে এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ
আয়কর মুক্ত থাকবে।