পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি:
ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করে দিনবদলের স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা। সম্প্রতি গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা ও নরসিংদীর পলাশ উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়েচলা শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসমান পদ্ধতিতে খাঁচায় মাছ চাষ করে দিনবদলের স্বপ্ন দেখছেন এখানকার চাষিরা।
ভাসমান এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা লাভজনক হওয়ায় নতুন এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন স্থানীয় মৎস্যজীবী ও বেকার যুবকরা। এতে শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এখানকার মানুষের মাঝে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকার পলাশ বাজার নদী ঘাটের পাশে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাসমান পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছেন সোহরাব হোসেন নামে এক মৎস্যচাষি। এখানে বড় বড় খাঁচায় করছে মাছের চাষ।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় দেড় বছর আগে এখানে নতুন এই পদ্ধতিতে সোরহাব মাছ চাষ শুরু করেন। তার এই ভাসমান পদ্ধতিতে মাছ চাষ দেখে এখানকার স্থানীয় অনেক মৎস্যজীবী ও বেকার যুবকরা আগ্রহী হয়ে উঠছে।
সোহরাব হোসেনের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, বাঁশ ও জাল দিয়ে বড় হাফা (বড় খাঁচা) তৈরি করতে হয়। খাঁচা পানিতে ভাসিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন হয় ড্রাম। এতে তেলাপিয়া, পাঙাশ, কই, শিং, মাগুর, গ্রাস কার্প, রুই, চিংড়ি, সরপুঁটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা যায়। বাজারে এসব মাছের চাহিদাও ভালো। তিনি আরও বলেন, মেঘনা নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষের বিষয়টি দেখে এর প্রতি আগ্রহী হই। পরে ইন্টারনেট ঘেঁটে এ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে এই পদ্ধতিতে আমি প্রথম শীতলক্ষ্যা নদীতে মাছ চাষ শুরু করেছি। সাফল্য পাওয়ায় এখন অনেকে এই নদীতে মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
সোহরাব হোসেন এ প্রতিবেদককে আরও বলেন, বর্তমানে তাঁর ৫০টি খাঁচা রয়েছে। একটি সারিতে ১০টি খাঁচা রয়েছে। এই ৫০টি খাঁচা তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৮ লাখ টাকা। প্রতিটি খাঁচার গভীরতা ৬ ফুট, প্রস্থ ১০ ফুট ও দৈর্ঘ্য ২০ ফুট। তিনি মূলত তেলাপিয়ার চাষ করেন। বছরের জুলাইয়ে পোনা কিনে খাঁচার মধ্যে লালন করতে শুরু করেন। পাঁচ মাসের মধ্যেই মাছ বিক্রির উপযুক্ত হয়। প্রতি খাঁচা থেকে ৩০০/৪০০ কেজি মাছ পাওয়া যায়। প্রতি কেজি মাছ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা বিক্রি হয়। একেকটি খাঁচায় খরচবাদে লাভ হয় অন্তত ৩০/৪০ হাজার টাকা।
তিনি আরও বলেন, স্বল্প পুঁজি নিয়েই এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যায়। প্রথমে খাঁচা তৈরি করতে এককালীন বেশি টাকা লাগে। এরপর শুধু খরচ হবে মাছের পোনা ও মাছের খাবার বাবদ। এর জন্য নিজস্ব জলাভূমির প্রয়োজন নেই। যে কেউ এই পদ্ধতিতে নদীতে মাছ চাষ করতে পারেন।
মৎস্য চাষী সোহরাব হোসেনকে সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শফিকুল আলম বলেন, এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ইচ্ছে করলে অনেক মৎস্যজীবী ও বেকার যুবকরা স্বাবলম্বী হতে পারে। সোহরাব হোসেনও বেকার যুবকদের জন্য একটি উদাহরণ।