দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছে সরকার। প্রধান পাঁচটি নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েও তা কার্যকর করা যায়নি। এছাড়া বাজারকেন্দ্রিক সিন্ডিকেট ভাঙতেও পারেনি সরকার। মাঝে কিছু পণ্যের দাম কমলেও আবার তা বাড়তে শুরু করেছে।
গত সপ্তাহে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৯০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। হঠাৎ করেই সেই দাম বেড়ে এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা বা তারও বেশি। ব্যবসায়ীদের দাবি, “সরবরাহে টান পড়ায় দাম কিছুটা বাড়তি।”
এদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া মুরগির বাজার তাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর আনন্দবাজার, কেল্লার মোড় বাজার, আজিমপুর ও নিউ মার্কেট কাঁচা বাজারে ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
আজিমপুর কাঁচাবাজারে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২২০ টাকা করে। নিউমার্কেট এবং পলাশী বাজারেও একই দাম। তবে আনন্দবাজার এবং কেল্লার মোড় বাজারে ১০ টাকা কমে ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সোনালি ও দেশি মুরগি গত সপ্তাহের মতোই ৩০০ ও ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। শিগগিরই দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
আনন্দবাজারের মুরগি ব্যবসায়ী শাহরিয়ার আলম জানান, গতকাল থেকেই পাইকারি বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ১৯০ টাকা হয়ে গেছে। এর আগ পর্যন্ত ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা ছিল। এ কারণে খুচরা ব্যবসায়ীদের বেশি দামে মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ায় বাজারগুলোতে ক্রেতারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। আজিমপুর ছাপড়া বাজারে বাকী বিল্লাহ নামে এক ক্রেতা জানান, প্রতি সপ্তাহেই বিভিন্ন উসিলায় বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে থাকেন। গত সপ্তাহে এবং এর আগের সপ্তাহে ব্রয়লারের দাম বেড়েছে। একবার দাম বাড়ার পর আর কোনোভাবেই তা কমে না।
শুক্রবারে সবজি ও মাছের বাজারেও চড়া দাম দেখা গেছে। সবজির বাজারে দেখা গেছে, কাঁচা পেঁপে ছাড়া কোনো সবজিই ৫০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে না। গোল বেগুন, কাঁকরোল, টমেটো, কচুরমুখি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ টাকায়। দেশি শসা, করলা, মুলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। পটল, চিচিঙ্গা ও ধুন্দল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।
এছাড়া গাজর ১২০ টাকা, শিম ১৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ২৪০ টাকা, ধনেপাতা ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে ইলিশ আকারভেদে ১,০০০ থেকে ১,৬০০ টাকা, রুই ও কাতল আকারভেদে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। চাষের কই ৩০০ টাকায় বিক্রি হলেও দেশি কই বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এছাড়া পাবদা ৪০০, তেলাপিয়া ২৫০ এবং পাঙ্গাশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০ টাকায়। তবে অন্যান্য দিনের মতোই চাষের মাছের চেয়ে নদীর মাছের দাম ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি।
গত তিন সপ্তাহ ধরে বাড়তে থাকা আলু ও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে গত সপ্তাহের দামেই। দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা, ভারতীয় ক্রস পেঁয়াজ ৯০ টাকা এবং আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য মুদি মালামালও গত সপ্তাহের দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
দ্রব্যমূল্যের বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা অফিসের প্রধান আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, “ব্রয়লার মুরগিসহ অন্যান্য পণ্য সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি হচ্ছে। বাজার মনিটরিং করার জন্য আমাদের টিম রয়েছে; তারা প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করছে। কয়েকটি জায়গায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বিক্রি করলেও তাদের জরিমানার আওতায় আনছি।”