কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
নব্বই বছর বয়সেও চা বিক্রি করেন রহিম উদ্দিন ওরফে (পঁচা মামা)। চায়ের নাম মালাই চা, বিশেষত্ব-এক কাপের বেশি চা কাউকে দেন না তিনি। এরকম ব্যতিক্রম দোকানটি রয়েছে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া এলাকার নাবিরবহ গ্রামের ‘লন্ডন বাজার’ নামক একটি স্থানে। রসনা মেটানো ও বিশেষত্ব মন্ডিত চা পান করতে এখানে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় জমান।
চাকচিক্য বা জাকজমট কোন দোকান নয় এটি। লন্ডন বাজারের চৌরাস্তায় পলিথিনে মোড়ানো ছোট ঝুপড়ি ঘরের মত দোকানটিই পঁচা মামার চায়ের দোকান। সকালে দোকান করেন না তিনি, প্রতিদিন দোকান চলে দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। তবে, প্রতি সোমবার সপ্তাহে একদিন বন্ধ রাখা হয় দোকানটি। বড় ছসপেনে করে মাটির চুলায় একাধারে ৩ ঘন্টা সময় ধরে প্রতিদিন গরম করা হয় আধা মন খাঁটি গরুর দুধ। চায়ের উপকরণ হিসেবে পুরো কাপ জুড়েই থাকে গরুর দুধ অল্প পরিমানে দেয়া হয় চায়ের লিকার ও চিনি।
পঁচা মামার ৯০ বছরের জীবদ্দশায় ৭০ বছরই কাটিয়েছেন চা বিক্রি করে। ২২ বছর চা বিক্রি করেছেন ওস্তাদের সাথে ঢাকার মহাখালীতে। পরবর্তীতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় চা বিক্রি শেষে ৮ বছর যাবৎ চলে এসেছেন নিজ গ্রামে। তিনি জানান, আগের ধারণা থেকেই নিজের গ্রামে একই কায়দায় চা বিক্রি শুরু করেন রহিম উদ্দিন।
রহিম উদ্দিন মালাই চা তৈরী শিখেছেন তার ওস্তাদের কাছ থেকে। তার ওস্তাদের নাম মহসিন মুন্সি। উনার বাড়ি রাজধানির মহাখালীতে। ওস্তাদ মহসিন মুন্সি ১৯৯০-১৯৯২ সালের মধ্যে ইন্তেকাল করেছেন।
রহিম উদ্দিন মাত্র ৫০ টাকা আর কয়েকটি চায়ের কাপ পুজি নিয়ে শুরু করেছিলেন এই ব্যবসা। প্রথমে এককাপ চা বিক্রি করতেন ১০ পয়সা। এরপর চারআনা, আটআনা, একটাকা এভাবে বাড়তে বাড়তে এখন বিক্রি করেন ২০ টাকায়। তিনি এখন প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা করে চা বিক্রি করেন। খরচ বাদে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় হয়। তার ইচ্ছা জীবনের শেষ পর্যন্ত চা বিক্রি করে যাবেন। তার পরিবারে ১ মেয়ে ও ১ ছেলে। ছেলের ঘরে দুই নাতি চাকরি করেন। পরিবারের সন্তাদের চা বিক্রি করেই পড়া লেখা করিয়েছেন তিনি।
পঁচা মামার মালাই চা নিয়ে যেমন ইতিবাচক মন্তব্য রয়েছে, চায়ের স্বাদ নিয়ে বর্তমানে তেমনি সোস্যাল দুনিয়ায় কিছু নেতিবাচক মন্তব্যও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকের মন্তব্য আগের মত এখন আর স্বাদ নেই।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে আসা আশিক খান বলেন, ‘ফেসবুকে দেখে চা খেতে আমরা ১২ জন বাইক নিয়ে এসেছি। চায়ের স্বাদ অসাধারন কিন্তু দুঃখের বিষয় এক কাপের বেশি খেতে পারলাম না।’
ফুলবাড়ীয়ার বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, ’প্রাইভেটকার, মটরসাইকেল ও রিক্সা নিয়ে অনেক দুর-দুরান্ত থেকে এই গ্রামে চা খেতে আসে অনেক মানুষ। নাবিরবহর (লন্ডন বাজার) চায়ের গ্রাম নামেই এখন মানুষ বেশি চিনে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রহিম উদ্দিন পঁচা মামা বলেন, এক কাপের বেশি চা দেওয়া আমার ওস্তাদের নিষেদ। তিনি আরো বলেন, এক কোটি টাকা দিলেও আমি একাধারে এক কাপের বেশি চা দিব না। এটা আমার ব্যবসার একটি বৈশিষ্ট্যও।’