গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতারা সারা দেশে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অব্যাহত ছাঁটাই-বরখাস্ত, গ্রেড কারচুপি, টার্গেটের নামে ফাও খাটানোসহ সকল হয়রানি, নির্যাতন অবিলম্বে বন্ধ এবং রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবি জানিয়েছেন।
শুক্রবার (০২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কেন্দ্রীয় শ্রমিক সমাবেশে এসব দাবি জানান সংগঠনের নেতারা। গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শ্রমিকনেতা মন্টু ঘোষের সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাজাহানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গার্মেন্ট টিইউসির উপদেষ্টা আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীম, সহসভাপতি জলি তালুকদার, কেন্দ্রীয় নেতা দুলাল সাহা, আব্দুস সালাম বাবুল, বাবুল হোসেন ও মাসুদ রানা প্রমুখ।
এ সময় শ্রমিকনেতারা মজুরি আন্দোলনে কারাবন্দি শ্রমিক ও নেতৃবৃন্দের মুক্তি এবং আন্দোলনে নিহত ৪ শ্রমিকের আজীবন আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান, হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানান।
সমাবেশে শ্রমিকনেতা মন্টু ঘোষ বলেন, শ্রমিকদের দাবি ও বর্তমান বাজার পরিস্থিতি অনুসারে মজুরি বৃদ্ধি করা হয়নি। উপরন্তু যে যৎসামান্য মজুরি বৃদ্ধি হয়েছে তা থেকেও নানা অপকৌশলে শ্রমিকদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কারখনার শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, তাদের পূর্বের গ্রেড থেকে পদাবনতি ঘটানো হয়েছে। একাধিক কারখানায় শ্রম আইন লঙ্ঘন করে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কমিটির নির্বাচিত সদস্যদের বরখাস্ত করা হয়েছে। নতুন মজুরি কাঠামো থেকে বঞ্চিত করতে ছাঁটাই-বরখাস্তের শিকার শ্রমিকদের নামে মিথ্যা তারিখ দিয়ে নোটিশ জারি করা হয়েছে। তিনি এসব অত্যাচার বন্ধের দাবি জানিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারখানাভিত্তিক রেশন চালু করার দাবি জানান।
উপদেষ্টা আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেন, বর্তমানে দেশ লুটেরাদের স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে। দেশের ৯৫ ভাগ শ্রমিক মেহনতি মানুষ লুটপাট ও অর্থ পাচারের নির্মম পরিণতি ভোগ করছে। এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকশ্রেণির রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করাই মুক্তির পথ। দেশে শ্রম মন্ত্রণালয় থাকলেও সেটা শ্রমিকদের স্বার্থে কাজ না করে মালিকের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে। নামে শ্রম মন্ত্রণালয় হলেও প্রকৃত অর্থে তা মালিক মন্ত্রণালয়ে পরিণত হয়েছে।
সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীম বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয়ের দুটি দপ্তর, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ও শ্রম অধিদপ্তর এ সব অনিয়ম ও আইন লঙ্ঘনের ঘটনায় তাদের দায়িত্ব পালন করছে না। একদিকে মজুরি বোর্ড খুবই অপর্যাপ্ত মজুরি নির্ধারণ করেছে, অন্যদিকে মালিকপক্ষ নানাভাবে শ্রমিকদের হয়রানি ও নির্যাতন করছে। অবিলম্বে এই অবস্থার প্রতিকার না করলে শ্রমিকরা কঠোর অবস্থান গ্রহণে বাধ্য হবে।
সহসভাপতি জলি তালুকদার বলেন, টঙ্গী বিসিক শিল্প নগরীতে ডিসেম্বর ২০২৩-এর প্রথম সপ্তাহে প্যাট্রিয়ট ইকো অ্যাপারেল লি. কারখানার অংশগ্রহণকারী কমিটির দুজন নির্বাচিত সদস্যকে বেআইনিভাবে বরখাস্ত করা হয়। যা বাংলাদেশ শ্রম আইনের ধারা ২০৫(১০) ও ধারা ১৯৫ লঙ্ঘনের কারণে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অথচ দীর্ঘদিন পূর্বে অভিযোগ গ্রহণ করেও অদ্যবধি শ্রম মন্ত্রণালয়ের দুই অধিদপ্তর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।