চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দৃঢ়ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মার্কিন অর্থনীতি। টানা দুই প্রান্তিকে সংকোচনের পর প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)। অর্থাৎ এটি ইঙ্গিত দেয় যে, অর্থনীতি মন্দার মধ্যে ছিল না। যদিও ফেডারেল রিজার্ভ আক্রমণাত্মকভাবে সুদের হার বাড়ানোর কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুই বছরের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ পদক্ষেপ বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
টরন্টোভিত্তিক আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান বিএমও ক্যাপিটাল মার্কেটসের একজন জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সাল গুয়াটিয়েরি বলেন, বাইরে থেকে হয়তো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি সংখ্যা দেখা যাচ্ছে। তবে মার্কিন অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ একটি চিত্র অপেক্ষা করছে। অতীত ও ভবিষ্যতে সুদের হার বৃদ্ধির পদক্ষেপের প্রভাব এখনো দেখা দিতে পারে। সব মিলিয়ে আগামী বছরের প্রথমার্ধে মার্কিন অর্থনীতি মন্দায় পড়তে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে।
জুলাই-সেপ্টেম্বরে মার্কিন জিডিপি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। এর আগে বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) দশমিক ৬ শতাংশ এবং বছরের প্রথম তিন মাসে দেশটির অর্থনীতি ১ দশমিক ৬ শতাংশ হারে সংকুচিত হয়েছিল। রয়টার্সের জরিপে অর্থনীতিবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন তৃতীয় প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৪ শতাংশ হবে। তৃতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি ও রফতানির ব্যবধান তীব্রভাবে সংকুচিত হয়েছে। চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে পণ্য আমদানি কমিয়ে দেয়ায় বাণিজ্য ঘাটতিও নিম্নমুখী হয়েছে। এ সময়ে দেশটির রফতানিও বেড়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি কমার বিষয়টি জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৭৭ শতাংশীয় পয়েন্ট যুক্ত করেছে। এ হার ১৯৮০ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের পর সবচেয়ে বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে প্রায় ৭০ শতাংশ অবদান রাখা ভোক্তা ব্যয় বছরওয়ারি হিসাবে ১ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে ২ শতাংশের তুলনায় ভোক্তা ব্যয়ে প্রবৃদ্ধির হার আরো ধীর হয়েছে। সর্বশেষ প্রান্তিকে রফতানি জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বড় অবদান রেখেছে। এ সময়ে মার্কিন পণ্যের রফতানি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। ২ দশমিক ৪ শতাংশ সরকারি ব্যয় বৃদ্ধিও এক্ষেত্রে সহায়তা করেছে। গত বছরের শুরুর দিকের পর প্রথমবারের মতো সরকারি ব্যয় ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
জুলাই-সেপ্টেম্বরে আবাসন খাতের বিনিয়োগে ধস নেমেছে। এ সময়ে বছরওয়ারি হিসাবে আবাসন বিনিয়োগে ২৬ শতাংশ পতন হয়েছে। এ নিয়ে টানা ষষ্ঠ মাসের প্রান্তিকে আবাসিক বিনিয়োগ সংকুচিত হয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভ আক্রমণাত্মকভাবে সুদের হার বাড়ানোর কারণে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে বন্ধকি ঋণের হার। এ ধরনের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় বিনিয়োগকারীরা সতর্ক অবস্থান অবলম্বন করছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি বছরের এখন পর্যন্ত পাঁচবার সুদের হার বাড়িয়েছে এবং আগামী সপ্তাহে ও ডিসেম্বরে আরো সুদের হার বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। ফেডের প্রধান জেরোম পাওয়েল সতর্ক করেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধির পদক্ষেপ উচ্চ বেকারত্ব এবং সম্ভবত একটি মন্দার মতো প্রভাব তৈরি করবে। অর্থনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান হাই ফ্রিকোয়েন্সি ইকোনমিকসের প্রধান মার্কিন অর্থনীতিবিদ রুবেলা ফারুকি একটি নোটে লিখেছেন, আগামীর দিকে তাকালে বিশেষ করে ভোগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়ে গিয়েছে। কারণ পরিবারগুলো উচ্চমূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে এবং কর্মসংস্থানের বাজার ধীর হয়ে যাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি এখনো চার দশকের সর্বোচ্চে থাকায় স্থির মূল্যবৃদ্ধি পরিবারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। একই সময়ের ক্রমবর্ধমান সুদের হার আবাসন বাজারকে সংকুচিত করছে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বড় ধরনের বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে বিশ্ব অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গি ততই নেতিবাচক হবে।