কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙা ইউনিয়নের উজান ঝগড়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। পঞ্চম শ্রেণির একাধিক ছাত্রীকে তিনি যৌন হয়রানি করেছেন বলে অভিযোগ দিয়েছেন এক অভিভাবক। সেই অভিযোগ তদন্ত করছে শিক্ষা অফিস। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
এদিকে ঘটনার পর থেকে নিপীড়নের শিকার একাধিক ছাত্রীসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকেরা। এ ঘটনায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে (ইউইও) মৌখিক অভিযোগ দিয়েছে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি।
ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলে, ‘হেড স্যার পানি আনার কথা বলে আমাকে লাইব্রেরির মধ্যে নিয়া গেইছে। নিয়া যায়া গায়ে হাত দিছে।’ ক্লাসের অনেকের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে বলেও জানায় সে।
ওই শিক্ষার্থীর নানি নাতনির অভিযোগের বরাত দিয়ে জানান, গত ৪ এপ্রিল দুপুরে উজান ঝগড়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল আলম পানি আনার কথা বলে নাতনিকে আলাদা কক্ষে ডেকে নেন। ওই শিক্ষার্থী পানি নিয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক তার শরীরে হাত দেন এবং অশালীন কথাবার্তা বলেন। এ ঘটনা কাউকে জানাতে নিষেধ করেন। এ সময় কক্ষ থেকে দৌড় দিয়ে বেরিয়ে যায় ওই শিক্ষার্থী। বাড়িতে ফিরে নানিকে ঘটনা জানায়।
ভুক্তভোগীর নানি বলেন, ‘পরে আমি আতাউর চাচাক (বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আতাউর রহমান) বিষয়টা জানাইছি। অহন আমার নাতনি স্কুলে যাইতে চাইতাছে না।’ পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই শিক্ষার্থীকে অন্য এলাকায় তার বাবার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীর অভিভাবকের অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আতাউর রহমান বলেন, ‘ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের ভয়ে স্কুল যাওয়া থেকে বিরত আছে।’ ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে উল্লেখ করে স্কুল পরিচালনা কমিটির এ সদস্য বলেন, প্রধান শিক্ষক আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আশরাফুল আলম বলেন, ‘উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ইউইও) এবং সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (এইউইও) স্যার স্কুলে এসেছিলেন। আমি মানসিকভাবে খুব খারাপ অবস্থায় আছি।’ এরপরই তিনি সংযোগটি কেটে দেন। পরে একাধিকবার চেষ্টা করা হলে তাঁর নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রধান শিক্ষককে স্কুল থেকে বদলির বিষয়ে জানতে চাইলে ইউইও বলেন, ‘বদলি শাস্তি নয়। বদলি হলে অন্য স্কুলে গিয়েও একই কাজ করতে পারেন। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।’