মানিকগঞ্জে
মহিন উদ্দিন (৪৫) নামে এক ব্যক্তি সন্তানসহ গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার
চেষ্টার করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, তাঁর স্ত্রী শিউলী আক্তার (৩৫) সৌদি আরব থাকতেন। সেখান
থেকে দেশে ফেরার পর প্রেমিকের সঙ্গে চলে যান। এই ক্ষোভ থেকে তিনি এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।
তবে মহিনের দাবি, গায়ে আগুন ধরানোর সময় তাঁর ছেলে পেছনে ছিল। এ সময় ছেলেকে দেখেন নি
তিনি। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের ভাড়ারিয়া গ্রামে আজ বৃহস্পতিবার সকালে
এই ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ
শিশু তুহিন হোসেনকে (৯) ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে
ভর্তি করা হয়েছে। আর অভিযুক্ত মহিন উদ্দিনকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট
জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অগ্নিদগ্ধ শিশু তুহিন
হোসেন মহিনের একমাত্র সন্তান। সে স্থানীয় ভাড়ারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয়
শ্রেণিতে পড়ে।
পুলিশ ও প্রতিবেশীরা
জানান, প্রায় ১১ বছর আগে মহিন উদ্দিন এবং শিউলী আক্তার বিয়ে হয়। বিয়ের দুই বছর পর তুহিনের
জন্ম হয়। কিন্তু মহিন নেশাগ্রস্ত হওয়ায় তাঁদের সংসারে অভাব অনটন ছিল। এ জন্য সংসারে
সচ্ছলতা ফেরাতে প্রায় দেড় বছর আগে কাজের সন্ধানে সৌদি আরব যান শিউলি বেগম। সেখানে থাকা
অবস্থায় ময়মনসিংহ জেলার রাসেল মিয়া নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে শিউলির প্রেমের সম্পর্ক
গড়ে উঠে। এরপর থেকে তিনি গ্রামের বাড়িতে টাকা-পয়সা পাঠানো বন্ধ করে দেন।
গত বছরের ২৮
ডিসেম্বর শিউলি সৌদি আরব থেকে দেশের বাড়িতে চলে আসেন। এরপর গত ৮ জানুয়ারি শিশুসন্তান
ও স্বামী মহিনকে রেখে প্রেমিকের সঙ্গে চলে যান এবং তাঁকে বিয়ে করেন। এ নিয়ে ক্ষোভ ও
হতাশার মধ্যে ছিলেন মহিন। এই ক্ষোভ ও হতাশার কারণে আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভাড়ারিয়া
গ্রামের নিজ বাড়িতে শিশুসন্তান তুহিন ও নিজের শরীরের পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন মহিন।
এরপর প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে মহিন ও তাঁর ছেলের শরীরের আগুন নেভান। তবে ততক্ষণে তুহিনের
শরীরের বিভিন্ন স্থান আগুনে ঝলসে যায়। এতে মহিনের মুখ, দুই হাত ও গলা ঝলসে যায়।
পরে প্রতিবেশীরা
শিশুটিকে পাশের হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। খবর পেয়ে পুলিশ ওই
বাড়ি থেকে দগ্ধ মহিনকে আটক করে জেলা সদরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি
করে। বর্তমানে পুলিশি পাহারায় সদর হাসপাতালের ষষ্ঠ তলায় সার্জারি ও অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ডে
মহিন উদ্দিনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অভিযুক্ত মহিন
উদ্দিনের বলেন, ‘আমার স্ত্রী শিউলীর অন্য ব্যক্তির সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। আমার নয়
বছরের সন্তানকে রেখে সে আরেক ব্যক্তিকে বিয়ে করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। এ কারণ আমি ক্ষোভ
থেকে নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম।’
সন্তানের শরীরের
আগুন দেওয়ার বিষয়ে মহিন উদ্দিন দাবি করে বলেন, ‘আমি আমার সন্তানকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারতে চাইনি। আমার পেছনে আমার ছেলে
দাঁড়িয়ে ছিল, সেটা আমি খেয়াল করিনি। আমার শরীরে পেট্রোল ঢালার সময় সন্তানের শরীরেও
আগুন লেগে যায়।’
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিল হোসেন বলেন, ‘দাম্পত্য কলহের জেরে শিশুসন্তান
ও নিজের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে ওই ব্যক্তি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে প্রাথমিক
তদন্তে জানা গেছে।’
ওসি বলেন, ‘পুলিশ পাহারায় ওই ব্যক্তিকে সদর
হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর অগ্নিদগ্ধ শিশু তুহিন হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য
ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। মহিন উদ্দিন কিছুটা সুস্থ হলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ
ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’