
যেকোনো দেশের মোট জনসংখ্যার একটি অংশ থাকেন প্রবীণ। তবে, প্রবীণদের কখনোই পরিবার বা সমাজের বোঝা ভাবা উচিত নয়। বরং তারা একটি পরিবারের অবিচ্ছেদ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা পরিবার ও সমাজের অনেক কিছুতেই অবদান রাখতে পারেন। তাই প্রবীণ সদস্যকে বোঝা না ভেবে তার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। তার অবদানকে গুরুত্ব দিতে হবে। সাধারণত পরিবারের একজন প্রবীণ সদস্য নানাভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন। কখনো শিক্ষক, কখনো পরামর্শদাতা, বন্ধু কিংবা গাইড হিসেবে তারা একটি পরিবারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি: বিশ্বব্যাপী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন প্রজন্মের বিচিত্র মনোভাবকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা প্রতিষ্ঠানের পুরনো কর্মচারী, এমনকি অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। পুরোনোদের মতামত ও তরুণদের মতামত মিলিয়ে কাজ করছে তারা। যদিও আমরা প্রায়ই বৈচিত্র্যকে শুধু সাংস্কৃতিক পরিভাষায় চিন্তা করি। তবে বিভিন্ন প্রজন্মের যে কাজের ভিন্নতা বা দৃষ্টিভঙ্গিতে পার্থক্য আছে, তার মূল্যায়নে কিন্তু ভালো ফল পাওয়া যায়। একইভাবে আমাদের বাবা-মা, দাদা-দাদি এবং বয়স্ক আত্মীয়দের জ্ঞান বিভিন্ন সময়ের বিবর্তনকে বুঝতে সহায়তা করতে পারে। এ ছাড়া আমাদের বর্তমান অবস্থান নিয়ে ভাবতে কিংবা তুলনা করতে সহায়তা করে।
সমাজের প্রতিচ্ছবি: শিশুরা ধীরে ধীরে তরুণ হয়ে ওঠে। তরুণ বয়স সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে তাদের বয়স্ক আত্মীয়দের সঙ্গে সময় কাটাতে উৎসাহিত করা উচিত। কারণ প্রবীণ মানুষগুলো বিভিন্ন মূল্যবোধের সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন। তাদের সমাজ নিয়ে বিস্তৃত অভিজ্ঞতা আছে। বয়স্করা তাদের এসব অভিজ্ঞতা তরুণদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারেন। আর দাদা-দাদি বা বয়স্ক আত্মীয়ের সঙ্গে সময় কাটালে নিজস্ব মূল্যবোধ প্রতিফলিত হয়। কারণ, পরিবারের প্রবীণ সদস্যটি আমাদের কাছে একটি সমাজের ভিন্ন ভিন্ন সময়ের প্রতিচ্ছবি।
যত্নশীল: ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় দাদা-দাদিরা প্রতি সপ্তাহে আনুমানিক ৫৮ ঘণ্টা পরিবারের ছোট সদস্যের যত্নে ব্যয় করেছেন। আর এটি তাদের সন্তানদের কর্মক্ষেত্রে নিশ্চিন্ত থাকতে সহায়তা করেছে। একই সঙ্গে তারা নাতি-নাতনির জন্য বাড়িতে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করেছেন এবং শিশুদের যত্নের বিষয়টিও সহজ করেছেন। তাই আপনার শিশুকে দাদা-দাদির সঙ্গে মিশতে দিন। তাহলে আপনার প্যারেন্টিংও সহজ হয়ে যাবে, সন্তানকে সামলানোর চাপ কমবে। এতে নিশ্চিন্তে অফিসসহ যেকোনো কাজে মনোযোগী হতে পারবেন। তা ছাড়া পরিবারের প্রবীণ সদস্যটির ছোটদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য অনেক সময় থাকে এবং তারা এটি পছন্দ করেন। আর এতে আপনার সন্তানের সময়গুলোও মজার হবে।
টিপস অ্যান্ড ট্রিকস: প্যারেন্টিং এমন একটি দক্ষতা, যা আমরা চাকরি থেকে শিখতে পারি না কিংবা কখনোই পুরোপুরি আয়ত্ত করি না। অন্যদিকে প্রতিবছর শিশুর মধ্যে নতুন পরিবর্তন আসে, কারণ প্রতিটি শিশু আলাদা। আবার এমন কোনো বই নেই, যা আপনাকে প্যারেন্টিংয়ের যাবতীয় সবকিছু শিখিয়ে দিতে পারে। তাই আপনি দাদা-দাদি, খালা, চাচা, বড় চাচাতো ভাই বা পারিবারিক বন্ধুদের কাছ থেকে টিপস ও পরামর্শ নিতে পারেন। তারা আপনাকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করতে পারবেন। এসব বিষয়ে তাদের আছে বিস্তর অভিজ্ঞতা। আপনি কীভাবে আরও ভালো অভিভাবক হয়ে উঠতে পারবেন, তার একমাত্র সমাধান কিন্তু এই প্রবীণরাই।
অনুপ্রেরণার উৎস: আমাদের পরিবারের বয়স্ক সদস্যরা প্রায়ই বিভিন্নভাবে লড়াই করেছেন এবং কঠিন সময় পার করে এসেছেন। তাই তারা পরিবারের তরুণ সদস্যদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। তাদের প্রতীক‚ লতার গল্প বা দীর্ঘ সময় ধরে জীবনের সঙ্গে লড়াইয়ের গল্প তরুণদের পরিশ্রমী হতে সহায়তা করে। তরুণদের উপলব্ধি করতে শেখায়, জীবনে কঠিন সময় আসবে। আর এটাই জীবনের স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু, কোনো পরিস্থিতিতে হাল ছাড়া যাবে না। বরং শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে। আবার পরিবারের একজন বয়স্ক সদস্য প্রায়ই পরামর্শদাতার ভূমিকা পালন করতে পারেন। যা তরুণদের অনুসরণ করতে উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত করতে পারে। অনেক সময় বাবা-মা-সন্তানের সম্পর্ক চ্যালেঞ্জিং হয়। তখন একজন দাদা-দাদি নিঃশর্ত ভালোবাসার বিমূর্ত প্রতীক হতে পারেন।
খুব বৃদ্ধ ভাববেন না: পরিবারের প্রবীণ সদস্যকে কখনোই খুব বৃদ্ধ ভাববেন না। বরং আপনার উচিত তাকে সামাজিকভাবে সক্রিয় রাখার এবং পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার সুযোগ দেয়া। মানুষের সঙ্গে কথা বলা, ইন্টারঅ্যাক্ট করা মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। এতে প্রবীণদের জ্ঞানশক্তি হ্রাস প্রক্রিয়ার গতি ধীর হয়ে যায়, যা তাদের জন্য খুবই ইতিবাচক একটি দিক। আবার ব্যায়াম এবং সামাজিক সম্পৃক্ততা ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে দারুণ কাজ করে। তাই তাদের সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকার সুযোগ দিন। তাদের সবার সঙ্গে দেখা করতে, দোকানে আড্ডা দিতে, সম্মিলিত ব্যায়ামে অংশ নিতে, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে বা বাইরে ঘুরতে সহায়তা করুন। পরিবারের প্রবীণ সদস্যরা একটি পরিবারের জ্ঞানের উৎস, শান্ত, নির্ভরযোগ্যতা এবং নিঃশর্ত ভালোবাসার প্রতীক। তারা তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যতের পথ প্রদর্শক। এই প্রবীণরা শিশু ও তরুণদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তাদের এই অবদানকে স্বীকৃতি দেয়া উচিত।