‘পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে মুজিব’স বাংলাদেশ প্রচারণার অংশ হিসেবে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল। আজ
বুধবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই ফেস্টিভ্যালের
উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
শিরীন শারমিন
চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। আমাদের দেশে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য
অন্য দেশের বৈচিত্র্য থেকে অনন্য। আমাদের দেশে যে ছয় ঋতুর বিবর্তন ঘটে, সেটিও অন্য
দেশের তুলনায় আকর্ষণীয়। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে যথাযথ ব্যবস্থার মাধ্যমে আমাদের
পর্যটনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দেশের সৌন্দর্য তুলে ধরে দেশে-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষিত
করতে হবে।’
জাতীয় সংসদের
স্পিকার বলেন, ‘আমরা সেন্টমার্টিনকে প্লাস্টিক ফ্রি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আগামীতে
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকেও প্লাস্টিক ফ্রি করার উদ্যোগ গ্রহণ করব। আমি আশা করি, সরকারের
সব পরিকল্পনা যথাযথ বাস্তবায়ন করা হবে। এর জন্য আমরা সবাই নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন
করব। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে এর একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের
মাধ্যমে হোটেলের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করে বিদেশি পর্যটকদের আনতে হবে। আমাদের টুরিজমের
সকল ঐতিহ্য রয়েছে। এটাকে আমাদের অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে। বিদেশি টুরিস্টরা আমাদের দেশে
এসে যে অর্থ ব্যয় করবে, সেটি আমার জাতীয় অর্থনীতিতে যুক্ত হবে।’
শিরীন শারমিন
চৌধুরী বলেন, ‘কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কোনো অ্যাকটিভিটিস নাই। যদি বিশ্বের অন্যান্য
দেশের মতো অ্যাকটিভিটিস তৈরি করা যায় তবে বিদেশি পর্যটকেরা আরও বেশি পরিমাণে আগ্রহী
হবে। ঢাকা সিটিতে পর্যটকদের জন্য বাস ট্যুরের আয়োজন করা যেতে পারে। এতে করে বিদেশি
পর্যটকেরা একটি ট্যুরের মাধ্যমে ঢাকা সিটির ঐতিহ্যগুলো দেখতে পারবে। পুরান ঢাকার জন্য
একটি রুট, নতুন ঢাকার জন্য একটি রুট, নদী পথেও একটি ট্যুরের আয়োজন করা যেতে পারে। আমি
মনে করি এটি আমাদের জন্য অনেক কার্যকর হবে।’
মন্ত্রী পরিষদ
সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, জিডিপির ১০ ভাগ পর্যটন খাত থেকে আসে। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা যখন প্রথম ক্ষমতায় আসেন তখন তিনি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
সে সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। তিনি ওই সময় সাপ্তাহিক ছুটির দিন একদিন থেকে বাড়িয়ে
দুই দিন নির্ধারণ করেন। সেই দুই দিন ছুটি থেকে পর্যটন খাতে মানুষের যে আগ্রহ তৈরি হলো
সেটি কিন্তু এখনো মানুষ ধরে রেখেছে। শুধুমাত্র ছুটির দিন ঘোষণা করলে পর্যটন হবে না।
পর্যটনের জন্য অনেক কর্মকাণ্ড তৈরি করতে হয়। পর্যটনে মানুষ তার দৈনন্দিন জীবন থেকে
একটু বৈচিত্র্য চায়। মানুষকে সেই ব্যবস্থাটা করে দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পর্যটনের সহায়তা করার জন্য প্রত্যেকটি জেলা পরিষদ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। যদি কোনো জেলা প্রশাসক অসহযোগিতা করে তবে সেটি মন্ত্রিপরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণের ব্যবস্থা করবেন।
আরও পড়ুন>> আরও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে: ব্রায়ান শিলা
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে
আরও বক্তব্য রাখেন—বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী
কমিটির সভাপতি র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন,
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত
দায়িত্ব) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. রাহাত
আনোয়ার, পরিচালক জামিল আহমেদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের
আয়োজন করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড
(বিটিবি)। ৪ দিনব্যাপী আয়োজিত এই ফেস্টিভ্যাল ২৭-৩০ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক
সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালে
এয়ারলাইনস, হোটেল, রিসোর্ট, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, টুরিস্ট-ভেসেল, ট্রাভেল এজেন্ট ও
ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। এছাড়া অংশগ্রহণ করেছে বিভিন্ন জেলার পর্যটন
পণ্য ও সেবা প্রদানকারীরা। দেশব্যাপী পর্যটনের বিভিন্ন অফারও আয়োজন আছে এ উৎসবে। চার
দিনব্যাপী আয়োজিত বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালে ২০টি হোটেল রিসোর্ট, অঞ্চলভিত্তিক খাবারের
স্টল ৭০ টি, ডিস্ট্রিক্ট ব্র্যান্ডিং এর আওতায় ২৯টি জেলা, ক্র্যাফট স্যুভিনির ২৬ টি,
এয়ারলাইনস দুইটিসহ বিনোদন পার্ক, ট্রাভেল এজেন্ট, ট্যুর অপারেটর, ট্যুর গাইড, বিদেশি
দূতাবাসসহ ১৬০ টির অধিক প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। এ উৎসবে আয়োজন আছে বিভিন্ন দেশের
খাবারসহ বাংলাদেশের অথেন্টিক ও ঐতিহ্যবাহী খাবারের। দেশি-বিদেশি ইউনিক ও অথেন্টিক খাবার
সম্পর্কে জানার এবং উপভোগ করার সুযোগ আছে এ উৎসবে।
দেশের ঐতিহ্যবাহী
খাবারের মধ্যে আছে জামতলার সাদেক গোল্লা, নকশি পিঠায় নরসিংদী জেলা, নাটোরের কাঁচা গোল্লা,
কুষ্টিয়ার কুলফি, পুরান ঢাকার হাজির বিরিয়ানি, বাকরখানি, মুক্তাগাছার মন্ডা, চট্টগ্রামের
মেজবান, খুলনার চুইঝাল, বিসমিল্লাহর কাবাব, কুমিল্লার রসমালাইসহ ৬৪টি জেলা থেকে ৭০
টির বেশি ঐতিহ্যবাহী ফুড স্টল। এ উৎসবে তাঁত, জামদানি তৈরির প্রক্রিয়া দেখার সুযোগ
রয়েছে। আমাদের ঐতিহ্য মসলিন পুনরুদ্ধার হওয়ার গল্প এবং মসলিন তৈরির প্রক্রিয়া প্রদর্শন
করা হচ্ছে।
দর্শনার্থীদের
তাদের আকর্ষণীয় ট্যুর প্ল্যান তৈরি করতে এ উৎসব সহায়তা করবে। তারা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক
সৌন্দর্য, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ইতিহাস, ঐতিহ্য, পুরাকীর্তি, পর্যটন সম্পদ সম্পর্কে
জানতে পারবেন। প্রতিটি জেলার পর্যটন আকর্ষণের ছবি দেখার সুযোগ পাবেন।
বিশ্ব পর্যটন
দিবস উপলক্ষে পর্যটক ও পর্যটন কেন্দ্রের নিরাপত্তা, আবাসন, অ্যাভিয়েশন পর্যটন খাতে
কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা এবং পর্যটনশিল্পে নারীর অংশগ্রহণ, প্রত্নপর্যটন, খাদ্যপর্যটন,
পর্যটন ও অ্যাভিয়েশন সাংবাদিকতা, প্লাস্টিক ফ্রি সেন্টমার্টিন ইত্যাদি বিষয়ে সেমিনার
অনুষ্ঠিত হবে। চার দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আছে গম্ভীরা, সিলেটের আঞ্চলিক গান,
গাজী কালুর পট, পথ নাটা, বাউল গান, পুথি পাঠ, কাওয়ালি এবং বিশিষ্ট শিল্পীদের গানের
আয়োজন ইত্যাদি।
উৎসবটি আয়োজনে
আইএলও, স্পেলবাউন্ড, এয়ারলাইনস, হোটেল, রিসোর্ট, এমিউজমেন্ট পার্ক, ট্রাভেল এজেন্ট,
ট্যুর অপারেটর, খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সহায়তা করছে। সকল ফেস্টিভ্যালের টাইটেল
স্পনসর মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক।