দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে
সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষা পিছিয়ে
গেছে। নতুন রুটিনে কবে শুরু হবে পরীক্ষা, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। বন্যার প্রভাবে
পেছাতে পারে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষাও।
তবে বন্যা পরিস্থিতি
স্বাভাবিক হলে ঈদের ছুটি শেষে নতুন রুটিনে ১০-১৫ দিন পিছিয়ে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা
শুরু হবে। মাধ্যমিক স্তরের এ পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরবর্তী দুই মাসের মধ্যেই এইচএসসি ও
সমমান পরীক্ষা শুরুর চিন্তা-ভাবনা চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড
সমন্বয় কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও
চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসএসসি-সমমান পরীক্ষার জন্য নতুন রুটিন দেওয়া হবে। আগের রুটিনের
আলোকে নতুন পরীক্ষার রুটিন তৈরি করা হবে, এক্ষেত্রে শুধু পরীক্ষা শুরুর সময়টা পরিবর্তন
হবে। পরীক্ষার্থীদের নতুনভাবে প্রস্তুতির জন্য ৭ থেকে ১৫ দিন সময় দেওয়া হতে পারে।
বোর্ড সূত্র জানিয়েছে,
সাধারণত এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার মাস দুই পর এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। মাঝের সময়টাতে
চলে প্রস্তুতি। এবার এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে জুনের পরিবর্তে জুলাইয়ের শেষ দিকে শুরু
হতে পরে।
এ বিষয়ে জানতে
চাইলে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক
তপন কুমার সরকার বলেন, বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে আমরা ঈদের আগে কয়েকটি পরীক্ষা
নেওয়ার চিন্তা করছি। বর্তমানে বিভিন্ন অঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পানিবন্দি হয়ে
পড়ায় তা সম্ভব হবে কি না, নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আমাদের প্রস্তুতি থাকলেও বন্যা
পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে, কবে শুরু হবে পরীক্ষা।
বিলম্বিত পরীক্ষায়
বিষয় কমানো হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে দেরি
হলেও পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত করা বা বিষয় কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। আগে রুটিন শিডিউল
অনুযায়ীই নতুন রুটিন দেওয়া হবে। তবে পরীক্ষা শুরুর সময়টা পরিবর্তন করা হতে পারে।
তিনি আরও বলেন,
একটি পরীক্ষার সঙ্গে আরেকটি সম্পৃক্ত। এ কারণে এসএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় এইচএসসিও
পিছিয়ে যাবে। সে কারণে আগামী বছরের এ দুই পরীক্ষা ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিলে আয়োজন করা সম্ভব
হবে না। সেগুলো শুরু করতে বিলম্ব হবে।
জানা গেছে, চলতি
বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নেবে। সাধারণ ৯টি
বোর্ডের অধীনে ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭১১ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। এর বাইরে দাখিলে ২ লাখ ৬৮
হাজার ৪৯৫ জন আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালে ১ লাখ ৬৩ হাজার
৬৬২ পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় বসবে।
পরীক্ষার্থীদের
অনেকের সঙ্গে কথা হলে তারা অভিযোগ করেন, দীর্ঘ আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে তারা নবম-দশম
শ্রেণিতে ক্লাস করেছেন। স্বাভাবিক সময়ে এতদিনে তাদের কলেজে ক্লাস করার কথা। করোনা পরিস্থিতির
কারণে তাদের জীবন থেকে মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে গেছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটি কবে স্বাভাবিক হবে,
কবে তাদের পরীক্ষা শুরু হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। পরীক্ষা শুরুর অন্তত ১৫ দিন আগে
নতুন রুটিন প্রকাশের দাবি তাদের।
এ বিষয়ে বোর্ড
চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার আরও বলেন, আসলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে সেখানে কিছু করার
থাকে না। তবে প্রথমদিকে করোনা ও পরবর্তীতে বন্যার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পরীক্ষা শুরুর ৭ থেকে ১৫ দিন আগে রুটিন প্রকাশ করা হবে।
তিনি বলেন, এসএসসি
পরীক্ষা আয়োজনের নিয়মিত সময় ছিল ফেব্রুয়ারি-মার্চে। তখন বৃষ্টিপাত বা বন্যার সম্ভাবনাও
থাকে না। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে নিয়মিত সময়ে পরীক্ষা আয়োজন সম্ভব হয়নি। করোনা
আমাদের শিক্ষা ক্যালেন্ডার তছনছ করে দিয়েছে। আমরা আবার আগের সূচিতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা
করছি।
১৯ জুন সারাদেশে
একযোগে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরুর প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু দেশে বন্যা পরিস্থিতির
অবনতি হওয়ায় গত ১৭ জুন সব শিক্ষাবোর্ডের এসএসসি জেনারেল, এসএসসি ভোকেশনাল এবং দাখিল
পরীক্ষা স্থগিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তত্ত্বীয় পরীক্ষা আগামী ৬ জুলাই পর্যন্ত আর
ব্যবহারিক পরীক্ষা ১৩-১৯ জুলাই পর্যন্ত হওয়ার কথা ছিল।
এর আগে শিক্ষামন্ত্রী
ডা. দীপু মনি পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কারণে এসএসসির ২৫ জুনের ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা
একদিন এগিয়ে ২৪ জুন আয়োজনের ঘোষণা দেন। এসএসসি পরীক্ষা ঘিরে ১৫ জুন থেকে সারাদেশের
কোচিং সেন্টার তিন সপ্তাহের জন্য বন্ধের নির্দেশ দেন তিনি।