প্রকল্পের কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত জুন মাসের ৩০ তারিখে। এখনও শুরু করাই হয়নি কাজ। অথচ বিল ভাউচার বানিয়ে কাজের পুরো ৬৬ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ৩৩ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে এ অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে।
তবে এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল ইসলাম। যোগাযোগ করা হলে সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরে আর কোনো তথ্য দেননি। এমনকি মোবাইল ফোনে কল করা হলেও ফোন ধরেননি মো. আনোয়ারুল ইসলাম।
তথ্যে জানা যায়, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) এর আওতায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এ উপজেলার ৩৩ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাইনর মেরামত বাবদ ২ লক্ষ করে মোট ৬৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কাজ বাস্তবায়নের শেষ তারিখ ছিলো গত ৩০ জুন। এখনো শুরু করাই হয়নি প্রকল্পের কাজ। ফেরতও দেয়া হয়নি টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ধর্মপুর ১ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে মেরামতের কোনো দৃশ্য চোখে পড়েনি। কথা হয় প্রধান শিক্ষক মো. আজহারুল ইসলামের সাথে। ২লক্ষ টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, প্লান ও আবেদন এখনো কিছুই করা হয়নি।
বোয়ালি ১ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা মিলেনি প্রধান শিক্ষক মো. আনিছুর রহমানের সাথে। সহকারী শিক্ষকদের সহায়তায় মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ফোন দেয়ার পর কথা হয় তাঁর সাথে। চা খেতে বাহির আছেন তিনি। তাঁর স্কুলে ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ আছে বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, টাকা বা চেক চাচ্ছি কিন্তু দিচ্ছেন না। না দিলে কিভাবে কাজ শুরু করবো। মাষ্টারদের তো আর এক্সট্রা টাকা থাকে না যে সে টাকা দিয়ে কাজ করবো। চেক বা টাকা পেলেই কাজ শুরু করবেন বলেও জানান এ প্রধান শিক্ষক।
কথা হয় বামনজল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাঃ দিনারা বেগমের সাথে। তিনি বলেন, টাকা না পেলে কাজ করবো কিভাবে। তবে গত বৃহস্পতিবার ইঞ্জিনিয়ার এসেছিলেন আশা করছি সপ্তাহখানেক পরে কাজ শুরু করতে পারবো।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির উপজেলা সভাপতি ও বোয়ালী ২ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, রেজুলেশন করে চাহিদা জমা দিয়েছি গত ২ আগস্ট। চেক পেলেই কাজ শুরু করবেন তিনি।
টাকা আছে নাকি ফেরত গেছে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ফেরত যায়নি এখনো টাকা আছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ না করেও টাকা ফেরত যায়নি এর কারণ জানতে চাইলে কোনো উত্তর দিতে রাজি হননি প্রধান শিক্ষক মো. জাহেদুল ইসলাম। কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩০ জুন। এখনো শুরুই করতে পারিনি। এটা চরম অনিয়ম বলেও স্বীকার করেন এ শিক্ষক নেতা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হারুন-অর-রশিদ এ বিষয়ে কোনো পরিষ্কার ধারণা না দিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নূর-এ-আলম বলেন, বিষয়টি শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলে দেখি। কেনো তাঁরা কাজ করেননি। আর না করে থাকলে বরাদ্দকৃত অর্থই বা তারা কি করেছে। এ ছাড়া অন্য কোনো বিষয় আছে কি না। খোঁজ নিয়ে জানাবো।