রাশিয়া এবং মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধের ঘটনা ঘটলে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ অনাহারে
মারা যেতে পারে, সোমবার প্রকাশিত রুটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বাধীন এক গবেষণায়
দেখা গেছে।
ন্যাচার ফুড জার্নালে
প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বিশ্বজুড়ে সূর্য-অবরোধকারী কালি এবং
ছাই ফসলের জন্য খাদ্য সরবরাহে ‘বিপর্যয়কর’ ব্যাঘাত
ঘটাবে। এমনকি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে একটি ছোট আকারের পারমাণবিক যুদ্ধও খাদ্য সরবরাহকে
ধ্বংস করবে, পাঁচ বছরের মধ্যে বৈশ্বিক উৎপাদন ৭ শতাংশ কমিয়ে দেবে এবং ২৫০ কোটি লোক
মারা যাবে। এই ক্ষেত্রে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা পারমাণবিক বিস্ফোরণের চেয়েও মারাত্মক
হবে বলে গবেষণায় ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।
গবেষণায় উঠে এসেছে
অত্যাধুনিক পারমাণবিক যুদ্ধ এবং এর কারণে বায়ুমণ্ডলে যে সূর্যালোকরোধী আস্তরণ দেখা
যাবে, তার প্রভাবে দেখা দেওয়া বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষে প্রায় ৫০০ কোটি মানুষের মৃত্যু হতে
পারে। এতে বলা হয়েছে, পারমাণবিক যুদ্ধের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় যত জন মারা যেতে পারে,
ঐ যুদ্ধের কারণে হওয়া বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষে সম্ভবত তার চেয়ে অনেক বেশি লোক মারা যাবে।
রুটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের
বিজ্ঞানীরা সম্ভাব্য ছয়টি পারমাণবিক সংঘাতের ক্ষেত্রে কী কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে
তার একটি পর্যালোচন করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ যা হতে পারে তা হল, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রর
মধ্যে পুরোদস্তুর পারমাণবিক যুদ্ধ, এতে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশিই নিশ্চিহ্ন
হয়ে যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পরমাণু অস্ত্র বিস্ফোরিত হওয়ার পর সৃষ্ট অগ্নিঝড়
থেকে বায়ুমণ্ডলে কী পরিমাণ গাদ বা কার্বন আস্তরণ প্রবেশ করতে পারে তা হিসাব করেই প্রতিটি
সংঘাতের ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ অনুমান করা হয়েছে।
গবেষকরা ন্যাশনাল
সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফিয়ারিক রিসার্চের সমর্থনপুষ্ট একটি জলবায়ু পূর্বাভাসমূলক টুলও
ব্যবহার করেছেন, যা তাদেরকে দেশ ধরে ধরে প্রধান প্রধান খাদ্যপণ্যের উৎপাদন কেমন হতে
পারে সে বিষয়ক একটি ধারণাও দিয়েছে। গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ তো
বাদ, তুলনামূলক ছোট আকারের পারমাণবিক সংঘাতও বৈশ্বিক খাদ্য উৎপাদনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে
পারে।
ভারত-পাকিস্তানের
স্থানীয় পর্যায়ের পারমাণবিক যুদ্ধের কারণেও পাঁচ বছরের মধ্যে বৈশ্বিক ফসল উৎপাদন আনুমানিক
৭ শতাংশের মতো কমে যেতে পারে বলে ঐ গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে; আর যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া
যুদ্ধে তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ফসল উৎপাদন কমতে পারে ৯০ শতাংশ।
পশুর খাদ্য হিসেবে
ব্যবহৃত ফসল ব্যবহারের মাধ্যমে বা খাদ্যের অপচয় কমিয়ে সংঘাত পরবর্তী তাৎক্ষণিক ক্ষতি
পূরণ করা যাবে কি না, গবেষকরা তাও খতিয়ে দেখেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তারা এ সিদ্ধান্তে
এসে পৌঁছান যে, পশু খাদ্য এবং খাদ্যের অপচয় রোধের মাধ্যমে যে সঞ্চয় হবে, তা বড় আকারের
যুদ্ধে যে ক্ষতি হতে পারে, তার তুলনায় নগণ্য। ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্র
ও রাশিয়ার মধ্যে সংঘাতের সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার মধ্যে এ গবেষণাটি প্রকাশিত হলো।
চলতি বছরের এপ্রিলে
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ পরমাণু যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার ‘গুরুতর ঝুঁকি’ বিদ্যমান বলে সবাইকে সতর্ক
করেছিলেন।
গবেষণা দলের অন্যতম
সদস্য এবং রুটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের জলবায়ুবিদ্যার অধ্যাপক
অ্যালান রোবোক বলেছেন, এসব তথ্য উপাত্ত আমাদের একটি জিনিসই বলছে। পারমাণবিক যুদ্ধ
ঠেকাতেই হবে, আর এটি কখনোই যেন না হয়।