আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঢাকা-ওয়াশিংটন টানাপড়েনের মধ্যেও বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ থেমে নেই। তিনি সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে প্রায় বৈঠক করছেন।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকের কথা দুপক্ষই জানালেও কি আলোচনা হয়েছে তা বিস্তারিত জানায়নি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক বহুমুখী। রাজনীতি ও নির্বাচনের বাইরেও নানা বিষয়ে দুদেশের মধ্যে নিয়মিত আলোচনা হয়। এ বৈঠকও এর ব্যতিক্রম নয়। পররাষ্ট্র সচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে আগামী ৫-৮ নভেম্বর সৌদি আরব সফর করবেন। এরপর তিনি জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউর (ইউপিআর) ৪৪তম অধিবেশনে অংশ নিতে আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত জেনেভা সফর করবেন। সচিবের সফরের আগে নিয়মিত বৈঠকের অংশ হিসেবে পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
এ বৈঠক প্রসঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের এক মুখপাত্র জানান, কূটনীতিক হিসেবে আমরা বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, নাগরিক সমাজ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যমকর্মী, ব্যবসায়ী নেতা, চেম্বার অব কমার্স, রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়িত্বশীল ব্যক্তি, সরকারি কর্মকর্তা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ অনেকের সঙ্গে আমাদের কথা হয়। এসব আলাপ-আলোচনা বাংলাদেশকে আরও ভালোভাবে বুঝতে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু আয়োজনে যারা বাধা দিবে, তাদের ওপর নতুন ভিসা নীতি প্রয়োগের স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দুই বছর হতে চললো এখনও প্রত্যাহার হয়নি র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংসতা ও প্রাণহানির পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারীমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বলেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সকল সহিংসতার ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করবে।
এদিকে সরকারের আশ্বাস সত্ত্বেও পিটার হাসসহ মার্কিন প্রতিনিধিরা প্রতিনিয়ত অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আহ্বান অব্যাহত রেখেছেন। গত মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠকের পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত শান্তিপূর্ণ উপায় খুঁজতে সংলাপের আহ্বান জানান। তাই সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রগুলোর ধারণা, চলমান রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে পররাষ্ট্র সচিবের কাছে হয়ত কোন বার্তা দিয়েছেন পিটার হাস।
অন্যদিকে ওয়াশিংটন ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ইসরায়েলের তেল আবিব সফর করছেন। আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি জর্ডান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত সফর করবেন। ইন্দো-প্যাসেফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করতে দিল্লি সফরে তার সঙ্গে থাকবেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। তারা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় মন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপে আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং দু’দেশের মধ্যকার কৌশলগত সম্পর্ক ও উদ্বেগের বিষয়ে আলোচনা করবেন। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশও দিল্লি-ওয়াশিংটনের আলোচনায় উঠবে।