হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের
সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। এই উৎসবকে ঘিরে দিনাজপুর হিলিতে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত
সময় পার করছেন শিল্পীরা। আগের চেয়ে কাজ বাড়লেও ব্যয় বাড়ায় তারা খরচ নিয়ে শঙ্কিত। তবে
গতবারের চেয়ে এবার ভালোভাবে পূজা উদযাপনের আশা মন্দির কমিটির।
হিলির বিভিন্ন
অঞ্চলে মন্দিরে মন্দিরে মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। দেবী দুর্গার প্রতিমা ছাড়াও
কার্তিক, গনেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতীসহ অন্যান্য প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন শিল্পীরা। বেশিরভাগ
মন্দিরেই কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
কারিগর শ্রিদাম
পাল বলেন, ‘আমার বাসা দিনাজপুর। আমি প্রতিবছর হিলিতে প্রতিমা তৈরির কাজ করে থাকি।
এবার করোনা পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় সবাই ভালোভাবে পূজার প্রস্তুতি নিয়েছেন। যে কারণে
কাজ বেড়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় হিলিতে আমি ছয়টি প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছি। কমিটির লোকজনের
চাহিদা অনুযায়ী এবার প্রতিমার আকার ও ডিজাইনে ভিন্নতা এসেছে। বর্তমানে আমরা মাটি দিয়ে
প্রতিমা তৈরি করছি। আর দুই-একদিন কাজ করলেই মাটির কাজ শেষ হবে। এরপর প্রতিমা শুকানোর
জন্য রেখে দেবো। পূজা শুরুর কয়েকদিন আগে রঙের কাজ শেষ করে কমিটির লোকজনের কাছে প্রতিমা
বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’
আরেক কারিগর
সুজিৎ পাল বলেন, ‘আমার দাদু আগে এই কাজ করতেন। পরবর্তী সময়ে আমার বাবা এ পেশায় আসেন। এরপর
আমি এসেছি। বাবার সময়টা ভালো ছিল। কিন্তু গত দুই বছর করোনা থাকার কারণে এবং বর্তমান
পরিস্থিতিতে আমাদের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
কারিগর বিশ্বজিৎ পাল বলেন, ‘করোনার কারণে গত দুই বছর কাজ তেমন না হলেও এবার ভালো কাজ পেয়েছি। কিন্তু দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে উপকরণের দাম। যে উপকরণ গত বছর ১৪ হাজার টাকায় কিনেছি, সেই উপকরণ এবার ২০ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। যে রঙ ১০৫ টাকায় কিনেছি সেটি এখন ১৪০ টাকা হয়ে গেছে। সব উপকরণের দাম বেড়েছে। একইসঙ্গে প্রতিমার দাম যদি বাড়তো, তাতে আমাদের একটু সুবিধা হতো।’
পালপাড়া সার্বজনীন
দুর্গা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার পাল বলেন, ‘দুই বছর করোনার কারণে আমরা সীমিত
আকারে দুর্গাপূজা উদযাপন করেছি। এবার যেহেতু করোনার তেমন প্রকোপ নেই, তাই ভালোভাবে
দুর্গাপূজা উদযাপনের প্রস্তুতি রয়েছে। আগামী ১ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শারদীয়
দুর্গাপূজা শুরু হবে ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে। আমাদের এখানে বরাবরই
ভালোভাবে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হয়। কোনও ধরনের সমস্যা হয় না।’
হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ছায়েম মিয়া বলেন, ‘উপজেলায় মোট ২১টি মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত
হবে। বেশীরভাগ মন্দিরে দেবী তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন ও বিটে
আমাদের বিট অফিসার রয়েছে। নিয়মিতভাবে তারা কমিটির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। সনাতন
হিন্দু ধর্মালম্বীরা যাতে নির্বিঘ্নে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করতে পারে, এ জন্য সব
ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। টহল পুলিশ, পোশাকধারী পুলিশ ও সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন
থাকবে। নিয়মিত টহল বাড়ানো হয়েছে, সামনের দিনে এটি আরও বাড়বে।’