রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন,
পশ্চিমা বিশ্ব গোলাবারুদ সরবরাহ বন্ধ করে দিলে ইউক্রেন ‘এক সপ্তাহও টিকবে
না’। বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক এক ফোরামে
তিনি এ কথা বলেন।
রাশিয়ার সোচিতে আয়োজিত রাজনৈতিক সম্মেলনে
পুতিন বলেন, কল্পনা করুন, আগামীকাল যদি পশ্চিমা বিশ্বের সহায়তা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে
ইউক্রেনের গোলাবারুদ শেষ হয়ে যেতে মাত্র এক সপ্তাহ লাগবে।
পুতিন এমন এক সময়ে এ বক্তব্য দিলেন, যখন
ওয়াশিংটনে রাজনৈতিক উথাল-পাতাল অবস্থা বিরাজ করছে। ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ
সহায়তা নিয়ে একধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
পুতিন বলেন, পশ্চিমা সামরিক ও আর্থিক সহায়তা
ছাড়া ইউক্রেন ‘এক সপ্তাহের’ বেশি টিকে থাকতে
পারবে না।
একই দিন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, কিয়েভের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ও সহায়তা যদি কমে
যায়, তাহলে তাঁরা সেই অভাব পূরণ করতে পারবেন না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চলতি সপ্তাহে
স্বীকার করেছেন, তিনি ‘চিন্তিত’। কারণ, ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন
লক্ষ্যচ্যুত হতে পারে।
সোচিতে বৃহস্পতিবার মস্কোভিত্তিক চিন্তক
প্রতিষ্ঠান ভালদাই ডিসকাসন ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে পুতিন বলেন, প্রতি মাসে শত শত কোটি
ডলার যে সহায়তা পাচ্ছে, তা দিয়ে ইউক্রেন কোনো রকম বিপর্যয় ঠেকিয়ে রেখেছে। যদি সহায়তা
বন্ধ হয়ে যায়, তারা এক সপ্তাহের মধ্যে মরবে।
পুতিন দাবি করেন, গত জুনে রুশ বাহিনীর
বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরুর পর থেকে কিয়েভ ৯০ হাজারের বেশি সৈন্য হারিয়েছে।
বৃহস্পতিবার স্পেনে ইউরোপীয় রাজনৈতিক কমিউনিটির
(ইপিসি) এক বৈঠকে ইইউর বিদেশ নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন, কিয়েভের প্রাথমিক দাতা
হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্থলাভিষিক্ত হতে পারবে না ইইউ।
বোরেল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র
যদি (ইউক্রেন) ত্যাগ করে, তাহলে ইইউ কি সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে পারবে?’
ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত ন্যাটোর
সদস্যদেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। ইইউ ও এর
সদস্যদেশগুলো অস্ত্র সরবরাহসহ নানা খাতে আগামী কয়েক বছরে ইউক্রেনকে ১০ হাজার কোটি ডলারের
বেশি সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। ওয়াশিংটন ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলার সামরিক সহায়তার
প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মানবিক সহায়তাসহ নানা খাতে কংগ্রেস আরও ১১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার
অনুমোদন করেছে।
কিন্তু প্রতিনিধি পরিষদে বিল পাস নিয়ে
অচলাবস্থার সৃষ্টি হলে মার্কিন সরকার শাটডাউনের ঝুঁকিতে পড়ে। এতে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের
নতুন আর্থিক সহায়তা স্থগিত হয়ে যায়। অবশ্য রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধি পরিষদে
বাইডেন সরকারকে অর্থছাড় নিয়ে শেষ মুহূর্তে অচলাবস্থার অবসান হয়। তবে এ জন্য প্রতিনিধি
পরিষদের রিপাবলিকান স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থিকে নিজ দলেই তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। হারাতে
হয়েছে স্পিকার পদ।
রিপাবলিকানদের মধ্যে কট্টরপন্থী অংশ ইউক্রেনে
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ করে দিতে চায়। ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক চিন্তক প্রতিষ্ঠান
ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ারের (আইএসডব্লিউ) জ্যেষ্ঠ ফেলো জিম ডুবিক বলেন, ইউক্রেনের
প্রতি কখন ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমে আসবে, সেই ক্ষণের অপেক্ষায় আছেন পুতিন।
সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসে যা হয়েছে, তাতে পুতিনের হাত থাকতে পারে।
ডুবিক বলেন, ‘ইউক্রেনের সহায়তায়
কাটছাঁট করে কংগ্রেস তো সরাসরি পুতিনের ইচ্ছার পক্ষেই কাজ করেছে। কংগ্রেসের সর্বশেষ
ঘটনা বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
বৃহস্পতিবার স্পেনে ইউরোপীয় নেতাদের বৈঠকে
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও ওয়াশিংটনে রাজনৈতিক ঝড় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ
করেছেন। তবে তিনি বলেন, তিনি এখনো আস্থাশীল, যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিকক্ষের সমর্থন এখনো
তাঁদের প্রতি আছে, থাকবে।
ইপিসি সম্মেলনে নেতারা বলেন, পুতিনের হিসাব
হচ্ছে, ইউক্রেনকে সমর্থন দিতে দিতে দীর্ঘ মেয়াদে পশ্চিমা বিশ্ব ক্লান্ত হয়ে পড়বে। এতেই
তাঁর জয়ের পথ খুলে যাবে।
এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী কাজা কালাস বলেন,
আমি মনে করি, রাশিয়া আমাদের ক্লান্ত করে দিতে চায়। আমাদের তাঁদের দেখিয়ে দেওয়া উচিত,
আমরা মোটেই ক্লান্ত নই। যত দিন দরকার আমরা ইউক্রেনকে সহায়তা করে যাব।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ইউক্রেনের
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক বৈঠকে জোর দিয়ে বলেন, তাঁরা ইউক্রেনকে ক্লান্তিহীন সমর্থন দিয়ে
যাবেন।
তবে এ দুজন যা-ই বলুন, ইইউতে যে চিড় ধরেছে,
তা অনেকটা পরিষ্কার। গত রোববার অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর স্লোভাকিয়ার সরকার
ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী রবার্ট
ফিকোর দল জয়ী হয়। এবার নির্বাচনে তাঁদের মূল বক্তব্যই ছিল, তাঁরা জয়ী হলে ইউক্রেনে
সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেবেন।