রাবি প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় তদারকি করতে আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম. তারেক নূরকে হলের অভ্যন্তরে অবরুদ্ধ করে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীসহ তার বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১ মার্চ) বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্র হলের মূল ফটকে তালাবদ্ধ করে তাঁকে অবরুদ্ধ করা হয়। তিনঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পরে তাকে উদ্ধার করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যদ্বয় অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলাম ও অধ্যাপক ড. এম. হুমায়ুন কবীর।
গতকাল অত্র হলের শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনসহ দুই ছাত্রীকে দুই ব্লকে দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষার্থী নুরুন্নাহার দোলন রুম পরিবর্তনে রাজি হয়নি। এছাড়াও সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন ছাত্র উপদেষ্টা তাদের শিক্ষকের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। যার ফলে তারা বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বঙ্গমাতা হলের মূল ফটকে অবস্থান নেন এবং ছাত্র উপদেষ্টাকে সেখানে অবরুদ্ধ করেন।
অবরুদ্ধ ছাত্র উপদেষ্টাকে উদ্ধার করতে প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক এবং সহকারী প্রক্টররা সেখানে আসেন। সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের আলোচনার জন্য অফিসে আসতে বলেন। কিন্তু সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা সামনা সামনি আলোচনায় আসার কথা বলতে থাকে। এক পর্যায়ে সমঝোতায় না আসলে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উপ-উপাচার্যদ্বয় অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম, অধ্যাপক ড. এম. হুমায়ুন কবীর এসে সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে সমঝোতায় আসে। এরপর বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ছাত্র উপদেষ্টাকে উদ্ধার করেন।
অবরুদ্ধ করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, নুরুন্নাহার দোলন (অভিযুক্ত) শিক্ষার্থীর উপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা যে তদন্ত এবং রুম পাল্টানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা যথাযথভাবে সঠিক হয়নি। তারা এ সিন্ধান্তকে মানবে না। ছাত্র উপদেষ্টার এমন সিদ্ধান্ত তাঁরা পক্ষপাতিত্ব হিসেবে দেখছেন। এজন্য তার পদত্যাগ চান গতকাল ছাত্রী নির্যাতনের অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ও তার সহপাঠীরা। এছাড়াও তাদের শিক্ষকের সাথে খারাপ ব্যবহারের জন্য ছাত্র উপদেষ্টাকে সবার সামনে ক্ষমা চাইতে হবে বলেও দাবি জানান তাঁরা।
এদিকে নির্যাতিত ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সুমাইয়া সুলতানার বিভাগের শিক্ষার্থীরা হলের অন্যপাশে অবস্থান নেয় ছাত্র উপদেষ্টাকে উদ্ধার করতে। তাঁরা বলেন, দোলন (অভিযুক্ত) আমাদের বান্ধবীকে (ভুক্তভোগী) যেভাবে নির্যাতন করেছেন তার সঠিক তদন্ত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টাসহ হলের আবাসিক শিক্ষকরা কাজ করছে। তিনি সঠিক তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো অন্যায় করেনি। কিন্তু অভিযুক্তরা স্যারের কাজে বাঁধা দিয়ে তাকে হলে অবরুদ্ধ করেছে।
এদিকে ছাত্র উপদেষ্টাকে হল থেকে বের করে নিয়ে আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, আমরা প্রাথমিক কাজগুলো করছি। এখন আমরা বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনায় বসবো। তদন্ত করে দেখে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবো আমরা।
এদিকে সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের মূল ফটকে অবস্থা নিয়েছে। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আলোচনা চলমান থাকায় সিন্ধান্ত জানা যায়নি।
উল্লেখ্য, রাবির বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের এক শিক্ষার্থীকে ৭দিন যাবত মানসিকভাবে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে একই হলের দোলন নামের এক সিনিয়র শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এদিকে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) নির্যাতন সইতে না পেরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেকে) ভর্তি করা হয়। তিনি বর্তমানে রামেকের ১৫ নং ওয়ার্ডে ভর্তি আছে। ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা তিন সদস্য বিশিষ্ট একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এবং প্রাথমিক ভাবে দুই শিক্ষার্থীকে হলের রুম পরিবর্তন করতে বলেন।