প্রায় ছয় হাজার মানুষের এ ক্যাম্পাসে কোথাও
দুর্গন্ধ নেই, নেই কোথাও ময়লার স্তূপ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা যেকোনো মানুষকেই মুগ্ধ
করে। তেমনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলে এখন চোখে পড়বে পরিচ্ছন্ন, ময়লা-আবর্জনাবিহীন
ক্যাম্পাস।
‘গ্রিন-ক্লিন-সেভ’ বিশ্ববিদ্যালয়
বিনির্মাণের অংশ হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ করা হয়েছে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট
প্ল্যান্ট।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অর্থায়নে
গত বছরের ২৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের তেত্রিশতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রকল্পটি উদ্বোধন
করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন।
প্ল্যান্টে নিয়ে যাওয়া বর্জ্যকে তিন স্তরে
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হয়। অজৈব ও দাহ্য বর্জ্যগুলোকে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এ প্রক্রিয়ায়
উৎপন্ন ধোঁয়া ৪০ ফুট উঁচু চিমনি বেয়ে ওপরে চলে যায়। ফলে পরিবেশের ক্ষতি হয় না। অজৈব
ও অদাহ্য বর্জগুলো সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আর জৈব বর্জ্যগুলো দিয়ে
প্ল্যান্টের এক পাশে উন্নত মানের সার উৎপন্ন করা হয়। মাটিতে জৈব সারের পরিমান পাঁচ
শতাংশ থাকা আদর্শ, যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই কম যার পরিমাণ এক শতাংশ থেকে দুই
শতাংশ। পচনশীল বর্জ্য দিয়ে জৈব সার তৈরি করা হয়। আর অপচনশীল দ্রব্যের মধ্য থেকে প্লাস্টিক
জাতীয় দ্রব্য আলাদা করে বাইরে বিক্রি করা হয়।
প্রতিদিন দক্ষ প্ল্যান্ট কর্মীরা সকাল
৯টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সঠিক নির্দেশনা মোতাবেক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করে
থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি হল ও ক্যাম্পাসজুড়ে প্রায় শতাধিক (শুকনা ময়লা ব্যবহারিত)
হলুদ, ও (ভিজা ময়লা ব্যবহারিত) সবুজ ডাস্টবিন নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর স্থাপন করা হয়েছে।
প্রতিদিন প্রায় ৩ থেকে ৪ বার এ বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। এতে দৈনিক প্রায় ২৫০ কেজি পচনশীল
ও ২০০ কেজি অপচনশীল বর্জ্য পাওয়া যায়। যে ময়লা-আবর্জনা নিচে বা ক্যাম্পাসের আশেপাশে
পড়ে থাকে, প্ল্যান্টের কর্মীরা সেগুলো সংগ্রহ করেন এবং প্ল্যান্টে নিয়ে যান।
সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্টের
তত্ত্বাবধায়ক মো. আজমুল হুদা আজাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্জ্য সংগ্রহ করে পচনশীল
ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করা হয়। পরে পচনশীল বর্জ্য দিয়ে জৈব সার তৈরি করা হয়। আর অপচনশীল
দ্রব্যের মধ্য থেকে প্লাস্টিক-জাতীয় দ্রব্য আলাদা করে বাইরে বিক্রি করা হয়। আর অন্য
দ্রব্য চুল্লিতে পোড়ানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত),
প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্ল্যান্টটি যেমন পরিবেশের
ওপর ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে, ঠিক তেমনি প্ল্যান্ট থেকে বৃহৎ পরিসরে সার উৎপাদন করা গেলে
আগামীতে কৃষি খাতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
গবেষকরা বলছেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এভাবে
নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট তৈরি করতে পারলে খুলনা নগরে ৪০ শতাংশ বর্জ্য কমে
আসবে। যা পরিবেশের জন্য খুবই ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।