লক্ষ লক্ষ ফুল, হাজার হাজার পতাকায় জানানো শ্রদ্ধা নিয়ে বিদায় নিচ্ছেন ৭০ বছর ধরে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য শাসন করা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। গত চারদিনে ওয়েস্টমিনস্টার হলে রাখা রানির কফিনে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ লম্বা লাইন, ২৪ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষার প্রহর, সবই লেখা থাকবে ইতিহাসের পাতায়। আজ সোমবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল চারটায়) শুরু হবে রানির শেষকৃত্য। এ যাত্রায় শামিল হবেন প্রায় দুই হাজার অতিথি। ইতোমধ্যে লন্ডনে পৌঁছেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫শ বিদেশি অতিথি ও রাষ্ট্রপ্রধান।
রানির শেষকৃত্যে
লন্ডনে বিশ্বনেতাদের যে সমাবেশ ঘটছে, তা গত কয়েক দশকের মধ্যে যুক্তরাজ্যের কোথাও দেখা
যায়নি। এই সমাবেশ ঘিরে ব্রিটেনের ইতিহাসের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে।
বলা হচ্ছে নিরাপত্তার বলয় মাটির নিচে ম্যানহোল থেকে আকাশে বিস্তৃত করা হয়েছে।
ইতোমধ্যেই লন্ডন
পৌঁছেছেন বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ্পে ও রানি ম্যাথিলডে, নেদারল্যান্ডসের রাজা উইলিয়াম
আলেক্সান্ডার ও রানি ম্যাক্সিমা, স্পেনের রাজা ফেলিপে ও রানি লেতিজিয়া। এ ছাড়া নরওয়ে,
সুইডেন, ডেনমার্ক এবং মোনাকোর রাজপরিবারের সদস্যরা উপস্থিত হয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট
জো বাইডেন, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী
জাসিন্দা আর্ডেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও উপস্থিত হয়েছেন। অন্যদের মধ্যে
জাপানের সম্রাট নারুহিতো, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মান প্রেসিডেন্ট
ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেনমায়ার এবং ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন
উপস্থিত থাকবেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট
শি জিনপিং আমন্ত্রণ পেয়েছেন, তবে তিনি সম্ভবত শেষকৃত্যে থাকছেন না। শনিবার চীন সরকার
নিশ্চিত করে ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং কিশান প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত হিসেবে শেষকৃত্যে
উপস্থিত থাকবেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আমন্ত্রণ পাননি। এ ছাড়া আফগানিস্তান,
বেলারুশ, মিয়ানমার, সিরিয়া ও ভেনিজুয়েলার কোনো প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
এদিকে শেষকৃত্যে
যোগ দিতে লন্ডনে পৌঁছানো অতিথিরা নতুন রাজা তৃতীয় চার্লসের আমন্ত্রণে বাকিংহাম প্যালেসে
দুপুরে ভোজে অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবিসির বিখ্যাত শো
সানডে উইথ লরা কুইন্সবার্গে সাক্ষাৎকারে রানির সঙ্গে তার অসাধারণ স্মৃতির কথা বলেছেন।
একই সঙ্গে তিনি রবিবার সকালে ওয়েস্টমিনস্টার হলে রানির মরদেহে শ্রদ্ধা জানান, সেখানে
শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
এদিকে শনিবার
ওয়েস্টমিনস্টার হলে রানির কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার
আট নাতি-নাতনি। রানির মৃত্যুর পর থেকে সাধারণ অনুষ্ঠানগুলোতে বেসামরিক পোশাক পরলেও
এদিন সামরিক পোশাক পরেন প্রিন্স উইলিয়াম। আর রাজার অনুরোধে ২০২০ সালের পর প্রথমবারের
মতো সামরিক পোশাক পরেন প্রিন্স হ্যারি। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো ব্রিটিশ শাসকের
শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে এভাবে যোগ দিলেন তার নাতি-নাতনিরা।
ওই অনুষ্ঠানে
রাজা তৃতীয় চার্লসের দুই ছেলে উইলিয়াম ও হ্যারির পাশাপাশি যোগ দেন প্রিন্সেস অ্যানির
সন্তান পিটার ফিলিপস ও জারা টিনডাল, প্রিন্স অ্যান্ড্রুর মেয়ে প্রিন্সেস বেট্রিস ও
ইউজেনি এবং প্রিন্স এডুয়ার্ডের সন্তান জেমস এবং ভিসকাউন্ট সেভরেন। প্রায় ১৫ মিনিট রানির
কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা।
ওয়েস্টমিনস্টার
হলে রানির প্রতি সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষ করে দেওয়া হবে সোমবার স্থানীয় সময়
সকাল সাড়ে ছয়টায়। এদিন রাষ্ট্রীয় শেষকৃত্যের জন্য রানির কফিন শোভাযাত্রার মাধ্যমে ওয়েস্টমিনস্টার
অ্যাবিতে নেওয়া হবে। ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, রানির শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান সারাদেশের
বিভিন্ন পার্ক, চত্বর ও সিনেমা হলে প্রদর্শন করা হবে।
শেষকৃত্যে যোগ
দেওয়া অতিথিদের মধ্যে থাকবেন রানির পরিবারের সদস্য, যুক্তরাজ্যের জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ,
বিশ্বের নানা দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং রানি যেসব দাতব্য সংস্থায় সহায়তা করতেন, সেসবের
প্রতিনিধি। এরপর একটি শোভাযাত্রা করে কফিনটি ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবি থেকে ওয়েলিংটন আর্চে
নেওয়া হবে, সেখান থেকে নেওয়া হবে উইন্ডসর দুর্গে।
রাষ্ট্রীয় শববাহী
যানে করে তার কফিনটি ‘লং ওয়াক’ নামের পথ দিয়ে উইন্ডসর গির্জার সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলে নেওয়া হবে এবং
সেখানেই রানিকে সমাহিত করা হবে রয়েল ভল্টের চেম্বারে। সারা পৃথিবীর কাছে যিনি রানি,
তিনি পরিবারের কাছে লিলিবেট, সেই লিলিবেট ফিরে যাবেন সেখানে, যেখানে শায়িত আছেন বাবা
রাজা ষষ্ঠ জর্জ, মা কুইন মাদার, বোন মার্গারেট, আর স্বামী প্রিন্স ফিলিপ।