মাঠঘাট শুকিয়ে চৌচির, যেন চৈত্র মাসের খরা।রাউজানে পানির অভাবে ব্যহত হচ্ছে আমনের চাষাবাদ। শ্রাবণ মাসের মত ভরা বর্ষার মৌসুমে দেখা নেই চাষ উপযোগী পর্যাপ্ত বৃষ্টির। শুকনো মৌসুমে বিভিন্ন পানির উৎস এবং গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানির ব্যবস্থা করলেও আমন মৌসুমের চাষ নির্ভর বৃষ্টির পানিতে। অনেকে বীজতলা প্রস্তুত করেছেন আরো একমাস আগে। কিন্তু পানির অভাবে মারা গেছে বেশিরভাগ। কেউ কেউ অল্প বৃষ্টিতে চারা রোপন করলেও এখন শুকিয়ে চৌচির তাদের জমি। এতে দুশ্চিন্তা আর হতাশায় দিন কাটছে স্থানীয় কৃষকদের।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায়, এবার ১২হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে ইতোমধ্যে ২৫১০ হেক্টর জমিতে ধান লাগানো শেষ হয়েছে। রাউজানে মোট ৩৪হাজার ৫শ ৪০ কৃষি পরিবারের প্রায় ১৮হাজার কৃষক আমন চাষের সাথে জড়িত। জুলাইয়ের ১৬তারিখ থেকে এখানে আমন রোপন শুরু হলেও বীজতলা প্রস্তুতি শুরু হয় জুনে। আগস্ট পর্যন্ত অনেকেই বীজতলা প্রস্তুত করেন যা রোপন শেষ হয় সেপ্টেম্বরে।
এদিকে এমন পরিস্থিতিতে কৃষকদের সম্পূরক সেচ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি অধিদপ্তর। যার দরুন কিছু এলাকায় বোরো মৌসুমে ব্যবহৃত পানির সেচ মেশিনগুলো চালু করা হয়েছে। তবে তা কৃষকদের জন্য পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছে তারা। কারণ আমনে বোরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি জমি চাষ হয়।
দক্ষিণ পূর্ব রাউজান গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় জমি নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছি। মোট সাড়ে আট কানি জমি চাষের জন্য প্রস্তুত করেও ধান লাগানো সম্ভব হচ্ছেনা। এর মধ্যে মাত্র দেড় কানি জমি স্থানীয় সেচ মেশিনের আওতায় আছে। বাকিগুলো বৃষ্টির পানি নির্ভর।
মো. আজম ও জামাল জানান, একবার শ্রমিক দিয়ে জমি প্রস্তুত করেছি। এখন তা শুকিয়ে গিয়েছে। বৃষ্টি হলে আবারো প্রস্তুত করতে হবে। এদিকে কাজের গতি না থাকায় অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে কাজের শ্রমিকদের বিদায় করে দিয়েছেন। বারবার শ্রমিকের বেতন দেওয়া অপরদিকে মেশিনের পানির ব্যবহারে চাষে খরচ কিছুটা বেড়েছে বলেও জানান তারা। তবে এমন অনাবৃষ্টির কারণকে জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন বলছে কৃষি কর্মকর্তারা। আগস্টের শুরুতে পর্যাপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা নিয়ে আশার কথাও জানান তারা।
এবিষয়ে রাউজান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুম কবির বলেন, অনাবৃষ্টি এটা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক একটি বিষয়। রাউজানে শুষ্ক মৌসুমে চাষের জন্য ৭৭টি বিদ্যুৎ চালিতসহ শতাধিক ডিজেল চালিত এলএলপি পাম্প রয়েছে। বৃষ্টি না হলেও উপজেলার বাগোয়ান, পশ্চিম গুজরা, পূর্ব গুজরা, বিনাজুরী, পৌর এলাকার বেশ কিছু জায়গায় কর্ণফুলি এবং হালদা নদীর শাখা খালে জোয়ারের পানি আসে। এসব খাল থেকে কৃষকদের সম্পূরক সেচ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এবছর চাষ একটু দেরিতে হলে তার কিছু প্রভাব একই জমিতে সবজি চাষাবাদে পড়বে।