সফররত গাম্বিয়ার
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও দেশটির প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত মামাদু তাঙ্গারা বলেছেন, মিয়ানমারের
রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যায় জড়িতদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। রোহিঙ্গারা নিজের
দেশে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে ফিরবেন। এ লক্ষ্যে তার দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুকে বিশেষ গুরুত্ব
দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, ওআইসি, জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু লেকচার সিরিজ বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক আদালতে
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার মামলার বিষয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা
ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার মামলা শুধু ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই
কাজ করবে না, বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার নীতিগত প্রতিবাদ
হিসেবেও ভূমিকা রাখবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে
মামাদু বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত- আইসিজেতে গাম্বিয়ার মামলা
নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল না। কেননা এটি আমাদের দেশের নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল। রোহিঙ্গা
ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মানবাধিকার এবং শান্তিরক্ষায় গাম্বিয়া কার্যকরী ভূমিকা
রাখতে চায়।
প্রধান অতিথির
বক্তব্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর
জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়ার ঐতিহাসিক লড়াই মানবাধিকারের প্রশ্নে দৃষ্টান্ত হয়ে
থাকবে- এমন মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, গাম্বিয়া আইসিজেতে
মামলা করে আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমরা আশা করি, একসময় এই
বিচার শেষ হবে, রায় আসবে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে বিচারহীনতার সংস্কৃতি শেষ হবে।
এজন্য গাম্বিয়াও আমাদের হৃদয়ে থাকবে।
তিনি আরও বলেন,
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সবাই সহানুভূতি দেখাচ্ছে। তবে কেউ প্রত্যাবাসনে যথাযথ সহায়তা করছে
না। মিয়ানমারের ওপর অনেক দেশ নিষেধাজ্ঞা দিলেও ঠিকই ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে,
সেখানে বিনিয়োগ করছে। বহুপক্ষীয়ভাবে এই ইস্যুর সমাধান করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও
বক্তব্য রাখেন ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টর মাশফি বিনতে শামস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
জাতিসংঘ অনুবিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক ইসলাম শাতিল।
বাংলাদেশ-গাম্বিয়া
সমঝোতা স্মারক সই : জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে একসঙ্গে কাজ করতে বাংলাদেশ ও গাম্বিয়া
একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। আজ রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মামাদু তাঙ্গারা
এ সমঝোতা স্মারক সই করেন।
গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বলেন, শান্তি সুরক্ষায় শান্তি রক্ষা মিশনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ। এটি খুব ইতিবাচক।
কোভিড-১৯ ও ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে বিশ্বজুড়ে সংকট চলছে। আর এই সংকট থেকেই প্রমাণিত হয়,
আমরা গ্লোবাল ভিলেজে রয়েছি। আমরা একযোগে এই সংকট থেকে উত্তরণ চাই।
বৈশ্বিক পরিস্থিতি
মোকাবিলায় বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা
এবং উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর আগ্রহ
প্রকাশ করেন।