আল্লাহ তায়ালা
ও বান্দার প্রেম আলাপের নাম দোয়া। দোয়া আল্লাহর সঙ্গে বান্দার কথা বলা। যে কোনো সময়ই
দোয়া করা যায়। তবে দোয়ার পথ অবারিত হয় রোজায়। খুলে যায় আরশের বিস্তৃত দুয়ার। দোয়া কবুলের
মাস রমজান। এ মাসের প্রতিটি মুহূর্তই দামি। প্রতি মুহূর্তেই দোয়া কবুল হয়। উম্মতদের
জন্য মহানবী (সা.)-এর উপদেশ হচ্ছে, রোজায় দোয়া, দরুদ-তাসবিহ ও ইস্তেগফার করা। হজরত
সালমান ফারসি (রা.) বলেন, শাবান মাসের শেষ দিন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের উদ্দেশে বক্তব্য
দেন।
মহানবী (সা.)
বলেন, হে লোক সকল! অবশ্যই তোমাদের সামনে মহান মাস, বরকতময় মাস উপস্থিত। এ মাসে তোমরা
৪টি কাজ বেশি বেশি কর। এর মধ্যে দুটি আল্লাহর জন্য, আর বাকি দুটি কাজ তোমাদের নিজেদের
জন্য। আল্লাহর জন্য ২ কাজ হলো- এক. তাসবিহ! এই সাক্ষ্য দেওয়া আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ
নেই। দুই. তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর নিজের জন্য দুই কাজ হলো- এক. জান্নাত লাভের
দোয়া করা, দুই. জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চাওয়া।
রমজানজুড়ে হাদিসের
নির্দেশনা মতে উল্লিখিত তাসবিহ, ইসতেগফারের পাশাপাশি আছে কিছু নিয়মিত দোয়া-দরুদও। প্রচলিত
চারটি দোয়াও তুলে ধরা হলো:
এক. রোজার নিয়ত
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন
আসুম্মা গাদাম্ মিন্ শাহরি রমাদ্বা-নাল মুবা-রাকি ফারদ্বাল্লাকা ইয়া-আল্লাহু ফাতাক্বাব্বাল
মিন্নি ইন্নাকা আনতাস্ সামিউল আলিম।
তরজমা : হে আল্লাহ!
আগামীকাল পবিত্র রমজানের ফরজ রোজা রাখার জন্য আমি নিয়ত করছি। তুমি তা আমার পক্ষ থেকে
কবুল করো। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। (জেনে রাখা ভালো, রোজা রাখার জন্য
নিয়ত করা ফরজ। তবে মুখে আরবি উচ্চারণ করা জরুরি নয়। নিয়ত শব্দের অর্থ হলো অন্তরের ইচ্ছা।
অন্তরের পরিকল্পনাই মূলত নিয়ত। কোনো ব্যক্তি রোজা রাখার নিয়তে যদি মনে মনে এই ভাবেন
যে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আগামীকাল রোজা রাখব, তাহলে তাঁর এই নিয়ত আদায়
হয়ে যাবে।)
দুই. ইফতারের দোয়া
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা
লাকা ছুমতু ওয়া আলা-রিজক্বিকা আফত্বারতু বি-রাহমাতিকা ইয়া- আরহামার রাহিমিন।
তরজমা : হে আল্লাহ!
তোমার জন্য আমি রোজা রেখেছি এবং তোমার দেওয়া রিজিক থেকে ইফতার করছি, হে পরম দয়ালু,
দাতা!
তিন. তারাবিহর নামাজের দোয়া
রমজান মাসে
এশার নামাজের পরে বিশ রাকাত তারাবিহ নামাজ পড়া হয়। বর্ণিত আছে যে, সাহাবায়ে কেরাম
(রা.) তারাবিহ নামাজে চার রাকাত পরপর বিভিন্ন দোয়া পাঠ করতেন। কোনো সাহাবারা এই দোয়াটিও
পাঠ করতেন।
উচ্চারণ : সুবহানা জিলমুলকি
ওয়ালমালাকুতি সুবহানা জিল ইজ্জাতি ওয়াল আজমাতি ওয়ালহাইবাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি
ওয়াল জাবারুত সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানুমু ওয়া লা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা।
সুববুহুন কুদ্দুসুুন রাববুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রুহ।
তরজমা : আল্লাহ পবিত্রময়
সাম্রাজ্য ও মহত্ত্বের মালিক। তিনি পবিত্রময় সম্মান, মহত্ত্ব ও প্রতিপত্তিশালী সত্তা।
ক্ষমতাবান, গৌরবময় ও প্রতাপশালী তিনি পবিত্রময় ও রাজাধিরাজ যিনি চিরঞ্জীব, কখনো ঘুমায়
না এবং চির মৃত্যুহীন সত্তা। তিনি পবিত্রময় ও বরকতময় আমাদের প্রতিপালক, ফেরেশতাকুল
এবং জিবরিলের (আ.) প্রতিপালক।
চার. ১টি দোয়া হাজার বছরের সওয়াব!
উচ্চারণ : জাযাল্লাহু
আন্না মুহাম্মাদান মা-হুয়া আহলুহ।
তরজমা : নবী করীম
(সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ১ বার এই দোয়া পাঠ করবে, ৭০ জন ফেরেশতা এক হাজার দিন পর্যন্ত
বিরতিহীনভাবে তার সওয়াব লিখতে থাকবেন। মাজমাউয যাওয়ায়েদ হাদীস নং ১৭৩০৫। এটা রমজান
মাস সেহেতু সকল ইবাদতের সওয়াব হবে ৭০ গুণ।