বড় লক্ষ্য তাড়ায়
নেমে দারুণভাবে শুরু করেছিল ফরচুন বরিশাল। মাঝে পথ হারানোর পর শেষদিকে ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছিল
তারা।
ম্যাচটা প্রায়
হাতের মুঠোয় নিয়ে এসছিলেন সাকিব-করিমরা। কিন্তু শেষ বল পর্যন্ত লড়াই চালিয়েও শেষরক্ষা
হলো না। বরং রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে মোহাম্মদ আমির ও রেজাউর রহমান রাজের দুটি অসাধারণ ওভারের
পর জয় তুলে নিল মাশরাফি বিন মর্তুজার সিলেট স্ট্রাইকার্স।
২০২৩ বিপিএলের
২৩তম ম্যাচে আজ শুরুতে ব্যাট করে ৫ উইকেট হারিয়ে বরিশালের সামনে ১৭৪ রানের লক্ষ্য ছুড়ে
দিয়েছিল সিলেট। মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জবাব দিতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে
১৭১ রানে থামে বরিশালের লড়াই। ফলে ২ রানের জয় তুলে নেয় সিলেট। রোমাঞ্চকর এই জয়ে এককভাবে
পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে এলো মাশরাফির দল। ৭ ম্যাচে ৬৭ জয়ে তাদের সংগ্রহ ১২ পয়েন্ট।
অন্যদিকে সমান ম্যাচে ৫ জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে বরিশাল।
লক্ষ্য তাড়ায়
নেমে দারুণ শুরু পায় বরিশাল। দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও ইব্রাহীম জাদরান মিলে তুলে ফেলেন
৪২ রান। তবে ৪ রানের ব্যবধানে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পরে যায় তারা। ১৯ বলে ৪ ছক্কায়
৩১ রান করা সাইফকে বিদায় করেন সিলেটের তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব। এরপর তিনে নেমে
দ্রুত ফেরেন এনামুল হক (৩)।
চাপের মুখে ইব্রাহীমকে
সঙ্গে নিয়ে ইনিংসের হাল ধরেন বরিশালের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দুজনে মিলে ৫১ রানের
দারুণ এক জুটি গড়েন। ফিফটির দিকে ছুটতে থাকা ইব্রাহীমকে (৪২) বিদায় করে জুটি ভাঙেন
রেজাউর রহমান রাজা। একই ওভারে ১৮ বলে ২৯ রান করা সাকিবের উইকেটও তুলে নেন রাজা। তবে
এরপরও হাল ছাড়েনি বরিশাল।
মাশরাফি বিন মর্তুজার
এক ওভারে হ্যাটট্রিক ছক্কা হাঁকিয়ে চাপ থেকে দলকে কিছুটা মুক্তি দেন করিম জানাত। ওই
ওভারে আসে ২১ রান। তাতে লক্ষ্যটাও ছোট হয়ে আসে। কিন্তু পরের ওভারে মোহাম্মদ আমির দারুণভাবে
চেপে ধরেন দুই অন-ক্রিজ ব্যাটারকে। তার করা ইনিংসের ১৭তম ওভারে আসে মাত্র ১ রান। সেই
সঙ্গে ওভারের শেষ বলে করিম জানাতকে কট অ্যান্ড বোল্ড করে আসল কাজটাও সেরে ফেলেন পাকিস্তানি
পেসার। ১২ বলে ২১ রান করে বিদায় নেন করিম।
শেষ ১৮ বলে ৪১
রানের লক্ষ্য দাঁড়ায় বরিশালের সামনে। সাকিবের করা পরের ওভারের প্রথম দুই বলে ইফতিখার
আহমেদের ব্যাট থেকে চার ও ছক্কায় আসে ১০ রান। তৃতীয় বলে স্ট্রাইকে গিয়ে ছক্কা হাঁকান
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ওই ওভারে সবমিলিয়ে আসে ১৮ রান। কিন্তু পরের ওভারের প্রথম বলেই
রিয়াদকে (৭) ফিরিয়ে ব্রেক থ্রু এনে দেন আমির। তবে স্ট্রাইকে গিয়েই ছক্কা হাঁকিয়ে বসেন
মেহেদি হাসান মিরাজ।
শেষ ৬ বলে ১৫
রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে গিয়ে প্রথম বলেই ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন ইফতিখার। রাজার
বলে সজোরে হাঁকিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু বাউন্ডারি তো দূরের কথা, ৪০ গজের মধ্যেই ধরা পড়েন
এই ডানহাতি ব্যাটার। ফলে ১২ বলে ২১ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন ইফতিখার। পরের বলে উইকেটরক্ষক
মুশফিকুর রহিমের সরাসরি থ্রোয়ে রানআউট হয়ে ফেরেন মিরাজও (৭)। পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে
জমিয়ে তোলেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। এতে শেষ বলে ৭ রান দরকার ছিল। কিন্তু ওয়াসিম হাঁকান চার।
ফলে ২ রানে জিতে যায় সিলেট।
এর আগে টস জিতে
সিলেটকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় বরিশাল। খালেদ আহমেদের করা প্রথম ওভারে ১০ রান নিলেন
শান্ত। কিন্তু পরের ওভারে তাণ্ডব চালান ওয়াসিম জুনিয়র। প্রথম বলে উপড়ে ফেলেন জাকির
হাসানের স্টাম্প। পঞ্চম বলে গ্লান্স করতে গিয়ে ফাইন লেগে ক্যাচ দেন তৌহিদ হৃদয়। ওভারের
শেষ বলে মুশফিকুর রহিমকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন ওয়াসিম। মুশফিক ও জাকির দুজনেই উপহার
দেন গোল্ডেন ডাক। অন্যদিকে ইনজুরি কাটিয়ে দুই ম্যাচ পর মাঠে নামা হৃদয়ের ব্যাট থেকে
আসে ৪ রান।
চাপের মুখে সেই
ধাক্কা সামাল দেন শান্ত। সঙ্গে পান টম মুরসের। চতুর্থ উইকেটে ৮১ রানের জুটি গড়ে তোলেন
তারা। তাতে আবারও রানের গতিতে ফিরতে শুরু করে সিলেট। মুরস ৩০ বলে ৪ চার ও ১ ছয়ে ৪০
রানে সাকিব আল হাসানের শিকার হয়ে ফিরলেও শান্ত চালিয়ে যান। ৪৮ বলে পূরণ করেন ফিফটি।
এরপর বাকি ১৮ বলে ৩৭ রান নেন বাঁহাতি এই ওপেনার। ১৬ বলে ৪ চারে ২১ রানের ক্যামিও ইনিংস
খেলেন থিসারা পেরেরা। তার উইকেটটি নেন কামরুল ইসলাম রাব্বি। প্রথম ওভারে ৩ উইকেট নেওয়া
ওয়াসিম পরের তিন ওভারে কোনো উইকেটের দেখা পাননি, উল্টো রান দিয়েছেন ২৯।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিলেট স্ট্রাইকার্স-
২০ ওভারে ১৭৩/৫ (শান্ত ৮৯, মুরস ৪০; ওয়াসিম জুনিয়র ৩৪/৩)
ফরচুন বরিশাল-
ইব্রাহীম ৪২, সাইফ ৩১, সাকিব ২৯, করিম ২১; রাজা ৪১/৩, সাকিব ৪০/২, আমির ২৪/২)