রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রথম ব্যাচের পারমাণবিক জ্বালানি (ইউরেনিয়াম) উৎপাদন প্রস্তুতি সনদসংক্রান্ত চুক্তি আজ শুক্রবার সকালে সই হয়েছে।
এ প্রটোকল স্বাক্ষরের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের অগ্রযাত্রায় আরো এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করল বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
রাশান ফেডারেশনের সাইবেরিয়ান অঞ্চলের রাজধানী নভোসিভিরসক শহরে সে দেশের রাষ্ট্রীয় সংস্থা রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান টিভিইএল-এর দপ্তরে এ প্রটোকল সই হয়। ঐতিহাসিক এই প্রটোকলে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, পরমাণু বিজ্ঞানী ড. মো শৌকত আকবর ও রাশান ফেডারেশনের পক্ষে এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ ভি ডায়েরি।
প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত জেনারেল কন্ট্রাক্ট অনুযায়ী রাশান ফেডারেশন নির্ধারিত চুক্তির অবিভক্ত অংশ হিসেবেই বাংলাদেশকে ইউরেনিয়াম ৩৬ জ্বালানি নিরাপত্তা দেবে। বাণিজ্যিক উৎপাদনের প্রথম দিন হতে পরবর্তী তিন বছর আলাদা করে জ্বালানির জন্য অর্থ পরিশোধ করতে হবে না। উভয়ের মধ্যে এই প্রটোকল ও রেডিনেস সনদ স্বাক্ষরের ফলে আন্তর্জাতিক বিধিবিধান ও আইএইএ গাইড লাইন এবং রেগুলেটরি রিকয়ারমেন্ট অনুযায়ী ফুয়েল উৎপাদনের আর কোনো প্রতিবন্ধকতা রইল না।
আরও পড়ুন >> নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট বিক্রি করতো চক্রটি
প্রটোকল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ান ফেডারেশনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান, প্রকল্পের উপপরিচালক ড. জাহেদুল হাছান, প্রকল্পের অর্থ ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান অলক চক্রবর্তী, নিউক্লিয়ার কাউন্সিলর শুভাশিস সর্দার।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ইউরেনিয়াম আমদানি দেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় মাইলফলক। পারমানবিক এই জ্বালানি আমদানি ও সংরক্ষণ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নিউক্লিয়ার ক্লাবে যুক্ত হবে। এ মর্যাদা পাওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের দরবারে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবেও পরিচিতি লাভ করবে। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে উৎপাদন শুরু করতে আর কোনো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জও থাকবে না।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নির্দেশনা মেনেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি আমদানি, পরিবহন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।
সূত্রমতে, স্পর্শকাতর এ জ্বালানি আমদানি, পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য আইএইএর অনুমোদন ও লাইসেন্সের পাশাপাশি রাশান ফেডারেশনের রপ্তানিনীতির আলোকে তাদের অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জ্বালানি আমদানি করে তা বিদ্যুৎকেন্দ্রে পাঠানো হবে। এ জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ সম্পৃক্ত থাকবে আরও অনেক মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর। নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে গোয়েন্দা তৎপরতা থাকবে।
পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে পদ্মা নদীর পাড়ে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ প্রকল্পটি দেশের ইতিহাসে এককভাবে সবচেয়ে বড় অবকাঠামো। রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরমাণু শক্তি কমিশন বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের জেনারেল ডিজাইনার ও কন্ট্রাক্টর রাশিয়ার রোসাটম করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা।
এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুটি ইউনিটে থাকছে ৩+ প্রজন্মের রুশ ভিভিইআর রিঅ্যাক্টর, যেগুলো সব আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চাহিদা পূরণে সক্ষম। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ চার ভাগের তিন ভাগ শেষ হয়েছে। কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট থেকে ২০২৪ সালে এবং এর পরের বছর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট করে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ার কথা রয়েছে।
২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বরে উদ্বোধনের পর নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রত্যাশিত গতিতে এগিয়ে চলছে এর নির্মাণকাজ। করোনা মহামারী, ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কাজ শেষ হতে কিছুটা দেরি হলেও এর ব্যয় বাড়বে না বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পের বেশির ভাগ যন্ত্রপাতি রাশিয়া থেকে দেশে এসে পৌঁছেছে। কিছু যন্ত্রপাতি আমদানি প্রক্রিয়াধীন। আগামী জুনের মধ্যে আনুষঙ্গিক সব পূর্ত কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ভারী যন্ত্রপাতি সংস্থাপন শেষে এখন চলছে জ্বালানি ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি।
প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এ প্রকল্পে রাশিয়া ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে এবং বাংলাদেশ সরকার দেবে ২২ হাজার ৫২ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার টাকা।