
সংকট মোকাবিলায়
জাতীয় সংসদে আজ ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার যে বাজেট উপস্থাপন করা হবে, তাতে সাত
খাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজেট প্রণয়নের
সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা জানান, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী পণ্য সরবরাহে যে
সংকট সৃষ্টি হয়েছে তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। কৃষিনির্ভর দেশ হলেও অধিক জনসংখ্যার
খাদ্য চাহিদা সামাল দিতে চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ বেশির ভাগ খাদ্যপণ্য আমদানি করতে হয়।
এই আমদানিনির্ভরতার কারণেই মূল্যস্ফীতির চাপ নিম্ন আয়ের মানুষকে সংকটে ফেলেছে। এবারের
বাজেট হবে সেই সংকট সামালের বাজেট।
অর্থ বিভাগের
এক কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাজেট প্রণয়নে প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) অর্জনের
ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলেও এবার সেটি বদলে যাচ্ছে। যে বাজেট উপস্থাপন করা হচ্ছে তার
মূল লক্ষ্য হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। পাশাপাশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসৃজন ও খাদ্য
উৎপাদন বাড়ানোর দিকেই বাজেটের ফোকাস রাখা হচ্ছে।
যে সাত খাতে অগ্রাধিকার
দেওয়া হচ্ছে : বাজেটে যে খাতগুলোতে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে সেগুলো হলো- (১) কভিড মহামারি
ও ইউক্রেন যুদ্ধ উদ্ভূত বৈশ্বিক সরবরাহ সংকটজনিত কারণে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা
ও অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি; (২) কভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা
প্যাকেজের বাস্তবায়ন ও সম্পন্নকরণ; (৩) অধিক খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ,
সেচ ও বীজে প্রণোদনা, কৃষি পুনর্বাসন, সারে ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত রাখা; (৪) ব্যাপক
কর্মসৃজন ও পল্লী উন্নয়ন; (৫) শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নসহ সার্বিক মানব সম্পদ উন্নয়ন;
(৬) সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতা সম্প্রসারণ এবং (৭) নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে
বিনা/স্বল্প মূল্যে খাদ্য বিতরণ।
বাজেট প্রণয়নের
সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন বাজেটে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে ৩১ দশমিক ৫
শতাংশ। এরমধ্যে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে ধরা হচ্ছে ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সরকারি বিনিয়োগ
ধরা হচ্ছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়াতে বেসরকারি খাতকে উজ্জীবিত করার
অনুষঙ্গ থাকবে বাজেটে। বিশেষ করে করোনা মহামারির কারণে প্রধানমন্ত্রী যে প্রণোদনা প্যাকেজ
ঘোষণা করেছেন, তার সঠিক বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হবে এই বাজেটে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি
উদ্যোক্তাদের হাতে প্রণোদনার অর্থ পৌঁছানোর বিষয়ে দিকনির্দেশনা থাকবে।
কর্মকর্তারা জানান,
মূল্যস্ফীতির চাপ প্রশমনের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাজেটে কৃষি
উৎপাদন বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কৃষক যাতে উৎপাদনে নিরুৎসাহিত না হয়, সে
কারণে বিশ্বব্যাপী সারের দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির পরও সরকার এ খাতে ভর্তুকি অব্যাহত
রাখছে। পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল খাদ্য উৎপাদনে সেচ ও বীজে প্রণোদনা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া
হচ্ছে। দ্রুত ফসল তোলা ও মাড়াইসহ বীজ বপনে কৃষি যান্ত্রিকীকরণেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এসব উদ্যোগ সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দও বাড়ছে বাজেটে। চলতি
অর্থবছরে এই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ১৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে নতুন বাজেটে বরাদ্দ
২৩ হাজার ২২৪ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান,
শহরের পাশাপাশি গ্রামের মানুষের আয় বাড়াতে বাজেটে ব্যাপকভাবে কর্মসৃজন ও পল্লী উন্নয়নে
বরাদ্দ বাড়াচ্ছে। শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি দক্ষতা বাড়ানোর ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে,
যাতে অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান ছাড়াও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়। মানব সম্পদ উন্নয়নে
প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ছে নতুন বাজেটে। চলতি বাজেটে এ খাতে ৫ হাজার ৯২১
কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও নতুন বাজেটে এটি বেড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। এ ছাড়া
কর্মসৃজন বাড়াতে নতুন বাজেটে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি
বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১৮ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ জানায়,
করোনা মহামারির কারণে গত বাজেটে দরিদ্র ও নিম্ন শ্রেণির জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি
সম্প্রসারণ করা হয়েছিল। এর বাইরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নগদ সহায়তা দিয়েছেন। ইউক্রেন
যুদ্ধের কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় এবার নিম্ন আয়ের মানুষ আরও চাপে পড়েছে। সেই চাপ
থেকে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে নতুন বাজেটেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির
আওতা বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে নিম্ন আয়ের মানুষকে বিনামূল্যে এবং স্বল্পমূল্যে খাদ্য
সরবরাহের উদ্যোগও থাকবে বাজেটে। বয়স্ক বিধবা অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ও মাতৃত্বকালীন ভাতাও
বাড়ছে। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা, নতুন বাজেটে এ খাতে
২৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। বেদে হিজরা ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্যও
বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে। বাজেটে সামাজিক কল্যাণ খাতে ৩২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও
নতুন বাজেটে এটি বেড়ে ৩৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা হতে পারে।