নাজমুল হোসেন শান্তর হাফসেঞ্চুরি হতে তখন
দরকার ৩ রান, জয়ের জন্য প্রয়োজন ২। অধিনায়ক দলকে জয় এনে দিলেন ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার
লেগ দিয়ে বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে। নিজের ফিফটিও হলো, বাংলাদেশও মাতলো জয়োল্লাসে।
প্রথম ম্যাচে অসাধ্য সাধনের কাছে এসেও
পারেনি বাংলাদেশ। বাঁচামরার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ালো স্বাগতিকরা।
শ্রীলঙ্কাকে রীতিমত নাকাল করে দাপুটে এক জয় তুলে নিলো নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে
আজ (বুধবার) বাংলাদেশ জিতেছে ৮ উইকেট আর ১১ বল হাতে রেখে। তিন ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা
ফিরিয়েছে টাইগাররা।
রান তাড়ায় ভালো শুরু করেন সৌম্য সরকার
আর লিটন দাস। লিটনকে বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখালেও সৌম্য অবশ্য শুরু থেকেই নড়বড়ে ছিলেন।
বারকয়েক বেঁচে যান আউট থেকে। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে তো আম্পায়ার আউট দিয়েই বসেছিলেন।
বিনুরা ফার্নান্দোর শর্ট লেংথের বলে পুল
করেছিলেন সৌম্য। বল চলে যায় উইকেটরক্ষকের হাতে। শ্রীলঙ্কার আবেদনে সাড়া দিয়ে আম্পায়ার
গাজী সোহেল আঙুল তুলে দেন। সৌম্য সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নিয়ে নেন। আল্ট্রা এজে স্পাইক দেখা
যায়।
কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ার মাসুদুর রহমান নটআউট
ঘোষণা করেন সৌম্যকে। বল আর ব্যাটের মধ্যে যথেষ্ট ফাঁক ছিল দাবি করেন আম্পায়ার। স্পাইকও
বল ব্যাট পেরিয়ে যাওয়ার পর এসেছে, জানানো হয়। যে আউট নিয়ে মাঠে অনেকটা সময় খেলা বন্ধ
করে রেখেছিলেন লঙ্কান ক্রিকেটাররা।
ওপেনিং জুটিতে আসে ৪১ বলে ৬৮ রান। সৌম্য
সুযোগ পেয়ে যে খুব কাজে লাগাতে পেরেছেন, তা না। ১৪ রানে জীবন পেয়েছিলেন, এরপর ২২ বলে
২৬ করে পাথিরানার বলে ম্যাথিউসকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। পাথিরানা নিজের পরের ওভারে
এসে তুলে নেন লিটনকেও। ২৪ বলে ৫ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় লিটনের ব্যাট থেকে আসে ৩৬।
সেখান থেকে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ম্যাচ বের
করে নিয়ে আসেন তাওহিদ হৃদয় আর নাজমুল হোসেন শান্ত। ৫৫ বলে তারা অবিচ্ছিন্ন থাকেন ৮৭
রানে। শান্ত ৩৮ বলে ৪ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় করেন ৫৩, হৃদয়ের ব্যাট থেকে ২৫ বলে ২ চার
আর ১ ছক্কায় আসে ৩২ রান।
এর আগে শ্রীলঙ্কাকে ৫ উইকেটে ১৬৫ রানে
আটকে রাখে বাংলাদেশ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে
টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। শরিফুল ইসলাম
বোলিং ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে শুরু করেন মেইডেন দিয়ে। প্রথম ওভারে এক রানও নিতে পারেনি
শ্রীলঙ্কা।
দ্বিতীয় ওভারে তাসকিন আহমেদও সেই চাপ ধরে
রাখেন। ৫ রান দিয়ে তুলে নেন আভিষ্কা ফার্নান্ডোর উইকেট। ৭ বলে ০ করা ফার্নান্ডো ঝুঁকি
নিতে গিয়ে বল তুলে দিয়েছিলেন আকাশে, তাসকিন নিজেই নেন ক্যাচ। ১ রানে প্রথম উইকেট হারায়
শ্রীলঙ্কা।
তবে শুরুর সেই চাপ ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ।
ইনিংসের চতুর্থ ওভারে তাসকিন দেন ১৭ রান, পঞ্চম ওভারে শেখ মেহেদি ৯। পাওয়ার প্লের শেষ
ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান বল হাতে নিয়ে বিলিয়ে দেন ১৫ রান। ফলে প্রথম ৬ ওভারে ১ উইকেটেই
৪৯ রান তুলে ফেলে লঙ্কানরা।
দ্বিতীয় উইকেটে ৪২ বলে ৬৬ রান যোগ করেন
কুশল মেন্ডিস আর কামিন্দু মেন্ডিস। অবশেষে সৌম্য সরকারকে বোলিংয়ে এনে এই জুটিটি ভাঙেন
অধিনায়ক। ২২ বলে ৩৬ করে কুশল মেন্ডিস ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষককে।
কামিন্দু মেন্ডিস মারমুখী হয়ে উঠছিলেন
ক্রমেই। দারুণ বোলিং করা রিশাদ হোসেনকে মেরেছিলেন ছক্কা। তবে পরের বলেই সঙ্গীর সঙ্গে
ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউটের ফাঁদে পড়তে হয় তাকে। ২৭ বলে করেন ৩৭। এরপর সাদিরা সামারাবিক্রমাকে
আটকে দেন মোস্তাফিজুর রহমান। ১১ বলে ৭ করে মোস্তাফিজের কাটারে বিভ্রান্ত হয়ে ফিরতি
ক্যাচ দিয়ে আসেন সাদিরা।
১৪তম ওভারে জোড়া ছক্কা খেয়ে চারিথ আসালাঙ্কাকে
বোল্ড করেন শেখ মেহেদি। আসালাঙ্কা ১৪ বলেই দুইশ স্ট্রাইকরেটে করেন ২৮। ১১২ রানে ৫ উইকেট
হারায় শ্রীলঙ্কা।
শেষদিকে ৩৬ বলে ৫২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি
গড়ে লঙ্কানদের লড়াকু পুঁজি এনে দেন দাসুন শানাকা আর অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। শানাকা ১৮
বলে ২০ আর ম্যাথিউস ২১ বলে করেন ৩২ রান।
শরিফুল উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে মাত্র ২০
রান খরচ করেন। সবচেয়ে খরুচে ছিলেন শেখ মেহেদি। ৪ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে একটি উইকেট নেন
এই অফস্পিনার। মোস্তাফিজ ৪ ওভারে ৪২ এবং তাসকিন ৩৮ রান দিয়ে নেন একটি করে উইকেট। সৌম্য
সরকার ১ ওভারে ৫ রানে নেন এক উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা: ১৬৫/৫, ২০ ওভার (কামিন্দু মেন্ডিস
৩৭, কুশল মেন্ডিস ৩৬, ম্যাথিউজ ৩২*; তাসকিন ১/৩৮, মেহেদী হাসান ১/৩৯, সৌম্য ১/৫)।
বাংলাদেশ: ১৭০/২, ১৮.১ ওভার (নাজমুল হোসেন
শান্ত ৫৩*, লিটন ৩৬, তাওহিদ হৃদয় ৩২*, সৌম্য ২৬; মাথিসা পাতিরানা ২/২৮)।