জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আরও ছয় মাস। এই সময় রাজধানী ঢাকা কবজায় রাখতে চায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তাই একই সময়ে রাজধানীতে মাত্র দেড় কিলোমিটার ব্যবধান দূরত্বে বড় কর্মসূচির ডাক দিয়েছে তারা। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীতে দেখা গেছে রাজনৈতিক ‘উত্তাপ’।
টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন আন্দোলনে থাকা বিএনপি আজ বুধবার এক দফা দাবি ঘোষণা করবে। বিএনপির নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে বড় জমায়েত করে এক দফা আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের কর্মসূচি দেবে। তাদের সঙ্গে থাকবে সমমনা দলগুলোও।
একইদিন শান্তি সমাবেশ কর্মসূচির নামে বড় জমায়েতের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটি ঢাকার রাজপথ বিএনপিকে ছেড়ে দিতে চায় না। আন্দোলনের আঁচ যেন রাজধানীতে না লাগে, সেই চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ।
সমাবেশের ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বলেন, শান্তি সমাবেশ সফল করতে প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী এতে অংশ নেবে। তারা কড়া অবস্থানে থেকে রাজপথ নিজেদের দখলে রাখবে। বিএনপি-জামায়াত যেন সমাবেশের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক থাকব।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটের শান্তি সমাবেশ সফল করতে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কড়া অবস্থানে থাকবে এ সমাবেশে। বিএনপি-জামায়াত ঝামেলা করতে চাইলে ছেড়ে দেওয়া হবে না। ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচন থাকায় ঢাকা মহানগর উত্তরে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করার ব্যাপারে আইনি বিধিনিষেধ রয়েছে। সে কারণে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে এ শান্তি সমাবেশে অংশ নেবে তারা। মিছিল নিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানার নেতারা সমাবেশে যোগ দেবে।
জানা গেছে, বিএনপির ও সমমনা দলগুলোর এক দফার মধ্যে উপধারা থাকবে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। এক দফা দাবি আদায়ে প্রথম কর্মসূচি ‘পদযাত্রা কর্মসূচি’র ঘোষণা আসতে পারে আজকের সমাবেশ থেকে। ২২ জুলাই পর্যন্ত বিভাগীয় সমাবেশ রয়েছে। তাই এই সময়ে মধ্যে প্রথম পদযাত্রা কর্মসূচি বরাবরের মতো শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পালনের নির্দেশনা আসতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিভিন্ন জোটের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের পদত্যাগ তথা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগকে “এক দফা” হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে আন্দোলনের নতুন যাত্রা শুরু করতে ঐকমত্যে পৌঁছেছি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সব রাজনৈতিক দল নিজ নিজ জায়গা থেকে আমাদের নতুন গণতন্ত্রের জন্য যে যাত্রা, একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নতুন যে আন্দোলনের যাত্রা তার ঘোষণা আমরা দেব।’
সমাবেশের প্রস্তুতির বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘আমাদের সমাবেশ হবে বরাবরের মতো সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। এ জন্য আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করছি, ইনশা আল্লাহ এই সমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নেবে। সমাবেশস্থলে আমরা মঞ্চ তৈরি করতে পারব না। তাই ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হবে। মঞ্চে কারা কারা থাকবেন সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মঞ্চের কোন পাশে কারা থাকবে, তা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ সফল করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আমরাও অনেকগুলো স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করেছি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে আমরা সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছি। জেলা ও বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে যেভাবে শত বাধাবিপত্তি এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ হয়েছে ঢাকার সমাবেশও তেমনি হবে। শত উসকানির মুখেও নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি দেখা গেছে। সমাবেশস্থল ছাড়াও অলিগলিতে পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসংখ্যাও বাড়তে থাকে।
মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেন, সমাবেশকে ঘিরে পুলিশের প্রস্তুতি রয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ইতোমধ্যে মোতায়েন রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ। মতিঝিল বিভাগ ছাড়াও অন্য বিভাগের পুলিশও সমাবেশকে কেন্দ্র করে আনা হয়েছে। সমাবেশের নামে কেউ নাশকতা বা বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে ভোটের পরিবেশ দেখতে ঢাকায় অবস্থান করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল ও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল। এমন সময় প্রধান দুই দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ কি বার্তা দিতে চাচ্ছে।