শেরপুর থেকে শাহরিয়ার শাকির
শেরপুর সদর, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী এই তিন উপজেলার সংযোগস্থল নালিতাবাড়ী উপজেলার কলসপাড় ইউনিয়নের মালিঝি নদীর শাখা কলস নদী। তিন উপজেলার সীমানা হওয়ায় কারোর দৃষ্টি নেই এ এলাকার মানুষের নানা সমস্যার দিকে। নালিতাবাড়ী উপজেলার কলস নদীর ওপর একটি ব্রীজ না থাকায় প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হতে হয় এ এলাকার ১৫ গ্রামের অন্তত ৩০ হাজার মানুষের। উৎপাদিত কৃষি পণ্যও আনা নেয়া করতে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ব্রীজ না থাকায় স্থানীয়দের উদ্যোগে নির্মাণ করা একটি বাশেঁর সাকো নির্মাণ করে কোন রকম যাতায়াত করে আসছে এ এলাকার মানুষেরা।
সরজমিনে দেখা যায়, নদীর একপাড়ে নালিতাবাড়ীর কলসপাড় ইউনিয়নের কলসপাড় গ্রামে অবস্থিত পশ্চিম কলসপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলসপাড নঈমি দাখিল মাদ্রাসার, মোহাম্মাদিয়া কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা যাতায়াত করেন এ নদীর ওপরের একটি বাশেঁর সাকোতে। স্বাস্থ্য সেবা নিতেও মানুষের আসতে হয় নদী পাড় হয়ে। আবার অসুস্থদের চিকিৎসা নিতে যেতে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। অনেক সময় মূমূর্ষ রোগীদের হাসপাতালে নিতে নিতেই মৃত্যুও হয়।
স্থানীয়দের দাবি, এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে বদলে যাবে এখানকার জীবনযাত্রা। উন্নতি হবে ব্যবসা বাণিজ্যের। আর এ দাবীতে তারা নদীর পারেই মানববন্ধনও করেছেন। জেলা প্রশাসনের আশ্বাস ব্রীজটি করে দেয়ার।
ঝিনাইগাতীর মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের মো: আরশাদ আলী বলেন, আমি বাড়ি বাড়ি গিয়া কাচাঁমাল (পেয়াজ, মরিচ, আদা, রশুন) এর ব্যবসা করি। নদীর ওপর এডা ব্রিজ ঐইলে (হলে) আমাগর খুব সুবিধা ঐতো। ভার নিয়া আর কত আমরা এই এক পায়ের ব্রিজ দিয়া যামু।
নালিতাবাড়ীর কলসপাড়ের গ্রামের বাসিন্দা মো: আবু সামা বলেন, এই ব্রিজটা হইলে আমাদের দুই উপজেলার মানুষের যোগসাজশ হইতো। এই ব্রিজের দুই পাশ্বেই পাকা রাস্তা আছে। মাঝখানে এই ব্রিজের জন্য অল্পকিছু কাচাঁরাস্তা। এই ব্রিজটা হলে আমাদের বাজারঘাট করতে খুব সুবিধা হইতো।
মোছা: আবেদা বেগম বলেন, আমরা নদীর এপাড়ের ঝিনাইগাতীর লোক। আমাদের গ্রামেও একটা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র আছে। কিন্তু এইটাতে আমরা চিকিৎসা নিতে পারি না। কারণ ঐদিকে কোন রাস্তা নাই। তার জন্য জীবনের ঝুকিঁ নিয়ে হলেও নৌকা বা সাকো দিয়া নদী পাড় হয়ে ওপাড়ে চিকিৎসা নিতে হয়। আর এখানে একটা ব্রিজ হইলে নালিতাবাড়ীর কলসপাড় ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া সুবিধা হতো।
পশ্চিম কলসপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোছা: বাছিরুন নাহার বলেন, আমি নদীর ওপাড়ে স্কুলে পড়ি। কিন্তু আমগর অসুবিধা হয় স্কুলও আইতে। স্কুলে আবার ধরলে নদীত পইরা জাইগা। নদীত পরে গেলে তো বই গুলাও ভিজে যাই। আর বই নষ্ট হয়ে গেলে তো আর পাওয়া যাই না। আমরা চাই আমাদের এলাকায় একটা ব্রিজ হোক।
নালিতাবাড়ীর কলসপাড নঈমি দাখিল মাদ্রাসা সুপার আব্দুস সামাদ বলেন, আমাদের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী আসে নদীর ওপার থেকে, তাই শিক্ষার্থীদের দিকে তাকিয়ে হলেও দ্রুত একটি ব্রিজ নির্মাণ করা দরকার।
স্থানীয়দের অভিযোগ ভোটের সময় হলেই চেয়ারম্যান মেম্বারগণ এ সমস্যার আশ্বাস দিলেও নির্বাচনের পরে কোন খবর থাকেনা জন প্রতিনিধিদের। তাই প্রতি বছর এলাকাবাসীরা নিজেদের উদ্যোগে বাঁশের সাকো তৈরি করে ঝুকি নিয়ে পারপার করে থাকে।
মো: করিম মিয়া বলেন, আমার বয়স ৬০ বছর। জন্মের পর থাইক্কাতো দেখাতাছি এনো সাকো আর সাকো। আমগর এলাকা কৃষি এলাকা। নদীর ওপাড়ে বাজার আছে। বাজরে আমরা তো মালামাল পারাপার কইরা নিতে পারি না। আমরা মেম্বার, চেয়ারম্যানদের কাছে মেলা গেছি কোন কাম হয় নাই। তাদের কাছে গেলে বলে আমাদের হাত নেই। আমরা মরার আগে ব্রিজ দেইক্কা যাবার পামু কিনা জানিনা।
এদিকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস নবনির্বাচিত নালিতাবাড়ী কলসপাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদের। তিনি বলেন, আমাদের এই ইউনিয়নের মানুষের দূর্ভোগের কারণ কলস নদী। নদীর ওপারের যে লোকগুলো আছে। তাদের সাথে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক। এ নদীতে একটি ব্রিজ জুরুরি দরকার। আমি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।
এদিকে শেরপুর জেলা প্রশাসক মো: মোমিনুর রশিদ জানান, বিষয়টি কেউ আমাদের নজরে আনেননি। আপনাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেলাম। আমরা এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে নিদের্শনা প্রদান করা হবে।
কলসপাড় ইউনিয়ন, কলসপাড় গ্রাম, মালিঝি নদী প্রবাহিত হয়ে এখানে এসে কলস নদী হয়েছে। এই নদীর ওপর ১শ ৫০ ফুট দীর্ঘ একটি ব্রিজ হলে বদলে যাবে এখানকার জীবনযাত্রা, উন্নয়ন হবে ব্যবসা বাণিজ্যের, নতুন করে স্বপ্ন দেখবেন এলাকার মানুষ। তাই আশ্বাস নয়, দ্রুত একটি ব্রিজ নির্মাণ হবে, এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।