মহাত্মা লালন
শুধু সুফি-দর্শনের পুরোধা ব্যক্তিত্বই নন, মানবতাবাদ আর সহজিয়া ধারারও প্রর্বতক। আগম-নিগম
দেহতত্ত্ব কিংবা দম সাধনা থেকে শুরু করে অতি উচ্চমার্গীয় সংস্কৃতির উদ্ভাসনও ঘটেছে
তাঁর গীতিময়তায়। সিদ্ধপুরুষ লালন সাঁইজির ১৩৩তম প্রয়াণ দিবস আজ।
বাংলার সিংহাসন
তখন হাতছাড়া, মানুষে মানুষে বিভেদ-বিদ্বেষ দিনে দিনে আরও প্রকট। এমন এক অন্ধকার সময়ে
ধর্মাধর্ম ভুলে মানবতাবাদের আবহ ছড়িয়ে দেন বাউল ফকির লালন সাঁইজি। সুর যার অস্ত্র,
শব্দবন্ধনী ঢাল আর চিন্তাদর্শনের ব্যাপ্তি পুরো বিশ্বে।
ধ্যানে-জ্ঞানে, ভাবে-দর্শনে সাঁইজির ব্রত ছিল বিশুদ্ধ মানুষ আর জাতপাতহীন সমাজ গঠন। ১১৮ বছর বেঁচে ছিলেন লালন সাঁইজি। সাধনার স্তরে স্তরে তিনি প্রকাশ করে গেছেন জীবনের স্বাদ-পরিসীমা ও রোগমুক্ত দেহের পরিব্যাপ্তি। পরিণত শিল্প কাঠামোয় যা হয়ে উঠেছে আঠারো মোকাম আর আট কুঠুরির সমৃদ্ধশালী দর্শন।
স্থলভাগের নির্ধারিত
রাজ্যের শাসক না হয়েও তাঁর আহ্বান ও সহজিয়া জীবন মানুষকে করেছে আকৃষ্ট। সাঁইজির সুরমূর্চ্ছনায়
শুধুই বেজেছে মানুষের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা।
কুসংস্কার আর
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লালন সাঁইজি ছিলেন সোচ্চার। সঙ্গীতের পরতে পরতে শ্লেষ, ব্যজস্তুতি
আর ছন্দ-অলংকার দিয়ে তা তিনি সরলভাবে তুলে ধরেছেন।
যুগ যুগ ধরেই
কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় বাউলেরা পালন করে আসছেন মহাত্মা লালনের অধিষ্ঠান আর প্রয়াণ উৎসব।
সময়ের প্রয়োজনে তাঁর দর্শন আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত-গ্রহণীয় ও গবেষণার আধারবস্তু।
১৮৯০ সালের
১৭ অক্টোবর ফকির লালন সাঁই ১১৬ বছর বয়সে কুষ্টিয়ার কুমারখালির ছেউড়িয়াতে নিজ আখড়ায়
মৃত্যুবরণ করেন।