চট্টগ্রাম জেলা
প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেছেন, গত ২২
এপ্রিল বিকেলে রাঙ্গুনিয়া থানাধীন সত্যপীরের মাজার সংলগ্ন সড়কে বাসের সাথে মোটরসাইকেল
দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই ছাত্র নিহত ও
অপর ছাত্র আহত হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। সড়কে অকাল মৃত্যু আমরা কখনো কামনা করি না।
এর পরেও দুর্ঘটনা থেমে নেই।
সড়ক দুর্ঘটনায় কারও অকাল মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কোন
সুযোগ নেই। এর পরেও সরকার, জেলা প্রশাসন ও বাস মালিক সমিতিক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে
দাঁড়িয়েছে। সড়ক পরিবহণ আইন মেনে গাড়ি চালালে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম থাকে। বাইক চালালে
লাইসেন্স ও হেলমেট পরিধান বাধ্যতামূলক। লাইসেন্স ও ডকুমেন্টবিহীন গাড়ি চালানো যাবেনা।
দুর্ঘটনায় চুয়েটের
নিহত দুই ছাত্র-যথাক্রমে শান্ত সাহা ও তাওফিক হোসেনের পরিবার ১০ লাখ টাকা করে মোট ২০
লাখ টাকা এবং আহত ছাত্র মোঃ জাকারিয়া হাসান হিমু ৩ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা পেয়েছে।
আজ ১৩ জুন বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে সড়ক দুর্ঘটনায়
নিহত চুয়েটের দুইজন ছাত্রের পরিবার ও আহত ছাত্রের অনুকূলে মঞ্জুরিকৃত অর্থের চেক হস্তান্তর
ও আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন,
ঐদিন (২২ এপ্রিল) দুর্ঘটনার পর ছাত্রদের পক্ষ থেকে এ সড়ক প্রশস্তকরণ, নিহতদের ক্ষতিপূরণ
ও নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর দাবি ছিল। আমরা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং সড়ক
পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়কে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা নিহত দুই
ছাত্রের প্রত্যেক পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ ও আহত শিক্ষার্থীর জন্য ১ লাখ
টাকা দিয়েছেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক নহায়তা হিসেবে ৩ লাখ টাকা
করে মোট ৬ লাখ ও আহত ছাত্রকে ১ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম-কাপ্তাই
বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে নিহত দুই ছাত্রের পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে মোট ৪ লাখ ও
আহত ছাত্রকে ১ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট
বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে চুয়েটের সড়কটি প্রশস্তকরণ করা হবে। নিহত দুই ছাত্র শান্ত
সাহা ও তৌফিকুর রহমানের নামে এ সড়কের নামকরণ করার বিষয়ে নিহত ছাত্রদ্বয়ের অভিভাবকের
অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমরা সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগকে প্রস্তাবনা পাঠাবো। দুর্ঘটনায় যে দুইজন
ছাত্র মারা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের নামে কোন ভবন বা চত্ত¡র নামকরণ করা যায় কি না জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিষয়টি উপস্থাপনসহ কর্তৃপক্ষকে
অবহিত করা হবে।
ডিসি বলেন,
সড়ক দুর্ঘটনায় চুয়েটের দুইজন ছাত্র নিহত হয়েছেন। একজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছিলেন। তিনি
আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম
প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল
আলম বলেন, দুই ছাত্র নিহত ও একজন ছাত্র আহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে
সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাৎক্ষণিক বৈঠক
করেন। এসময় আমাদের ছাত্ররা বেশকিছু দাবি উত্থাপন করে। তিনি তাদের দাবিগুলো পূরণের অঙ্গিকার
করেন। তিনি কথা রেখেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা মর্মাহত। যে ক্ষতি হয়েছে তা কখনোই
পূরণ হওয়ার নয়। আমাদের দুই ছাত্র নিহত ও একজন ছাত্র আহত হওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা
প্রশাসক তাৎক্ষণিক যে পদক্ষেপ নিয়েছেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যার কারণে পরিস্থিতি
অনেকটাই অনুকূলে চলে আসে।
অতিরিক্ত জেলা
ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত চেক বিতরণ অনুষ্ঠানেবক্তব্য
রাখেন চুয়েট ছাত্র কল্যাণ পরিষদের পরিচালক অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম। অনুষ্ঠানে পুত্রের
মৃত্যুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নিহত ছাত্র শান্ত সাহার পিতা কাজল
সাহা ও মৃত তাওফিক হোসেনের পিতা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। দুর্ঘটনার বর্ণনা দেন আহত
ছাত্র মোঃ জাকারিয়া হাসান হিমু। রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার অংগ্যজাই মারমা, বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার উর্থী, নিহত ও আহত ছাত্রদেও পরিবারের
সদস্যরা এসময় উপস্থিত ছিলেন ।
উল্লেখ্য যে,
গত ২২ এপ্রিল বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বের হয়ে বাসের ধাক্কায় প্রাণ
হারান চুয়েট পুরকৌশল বিভাগের দুই শিক্ষার্থী। রাঙ্গুনিয়া থানার সত্য পীরের মাজার গেইট
সংলগ্ন সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থলে মারা যান চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয়
বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা এবং গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান
একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তাওফিক হোসেন। এ ছাড়া গুরুতর আহত হন পুরকৌশল বিভাগের
দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোঃ জাকারিয়া হাসান হিমু।