জয়পুরহাট পৌরসভার
বাসিন্দাদের সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ২০১৪ সালে নির্মাণ করা হয় ওভারহেড ট্যাংক।
৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পৌরসভার খঞ্জনপুরে প্লান্টটি নির্মাণ করা হলেও এর সুফল পাননি বাসিন্দারা।
পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট নির্মাণের কথা থাকলেও সেটা করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রায়
এক যুগ ধরে পড়ে রয়েছে ওভারহেড ট্যাংকটি। পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট না থাকায় ১০ বছর ধরে
সুপেয় পানি সংকটে রয়েছে পৌরসভার বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা
বলছেন, সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি, অনিয়ম আর দুর্নীতিতে ওই প্লান্টটি এখনো বাস্তবায়ন করা
যায়নি। বর্তমানে ট্যাংকটি পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ১০ বছর ধরে তারা
সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত। দ্রুত ওই ট্যাংক চালু করে সুপেয় পানি সরবরাহের দাবি তাদের।
জয়পুরহাট পৌরসভা
সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৬ জুন ওভারহেড ট্যাংক ও পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট নির্মাণ
শুরু করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। মাঝারি শহরে পানি সরবাহ ও স্যানিটেশন (জিওবি-এডিবি) যৌথ
সেক্টর প্রকল্পের আওতায় পৌরসভার খঞ্জনপুরে প্লান্টটি নির্মাণ করা হয়। তবে প্রকল্প প্যাকেজের
আওতায় তখন শুধু ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণ করা হলেও পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট করা হয়নি
সেখানে। প্রকল্পটির চুক্তিমূল্য ছিল ৬ কোটি ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার ৭৭৯ টাকা। ২০১৪ সালের ১০
এপ্রিল কাজটি শেষ হয়। প্রকল্প বুঝিয়ে দিয়ে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ৫ কোটি ৩৫ লাখ ৩ হাজার
৬৬৩ টাকা বিল উত্তোলন করে নিলেও ১০ বছরে সুপেয় পানি সরবরাহ করা যায় নি।
এব্যাপারে জয়পুরহাট
পৌরসভার প্যানেল মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস ঝর্ণা বলেন, আমি বিষয়টি পৌরসভার বিভিন্ন বৈঠকে আলোচনা
করেছি। কিন্তু কেউ তখন সেটাকে গুরুত্ব দেননি। এজন্য সমাধানও হয়নি।
কর্তৃপক্ষের গাফিলতি,
অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ট্যাংক দিয়ে পানি সরবরাহ শুরু হয়নি বলে মনে করেন পৌরসভার বাসিন্দারা।
পরিত্যক্ত থাকায় ট্যাংকসহ ও অন্যান্য সরঞ্জাম অকেজো হয়ে পড়েছে।
এপ্রসঙ্গে প্যানেল
মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস ঝর্ণা বলেন, এখানে অবশ্যই দুর্নীতি করা হয়েছে, না হলে এতদিনেও এটি চালু
হলো না কেন? জনগণের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছি। এজন্য আমি
চাই এটা দ্রুত চালু করা হোক, এতে জনগণের উপকার হবে। বিষয়টি নিয়ে আমি আবারো স্থানীয়
সরকার বিভাগের উপপরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ও পৌরসভার প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করব। শিগগিরই
ট্যাংকটি চালুর ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে ট্যাংকটি
বন্ধ থাকায় পূর্ব এলাকার ট্যাংক থেকে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। দ্রুত পানি বিশুদ্ধকরণ
প্লান্ট নির্মাণ করে বন্ধ ট্যাংকটি চালুর দাবি জানিয়েছেন পৌরসভার বাসিন্দারা।
খঞ্জনপুরের খালেক
উদ্দিন, আবু বকর সিদ্দিক আব্দুর রহমান ও ফিরোজসহ কয়েকজন নাগরিক বলেন, ‘আমরা হতাশ হয়েছি। এখনো অনেকেই জানেন না,
ট্যাংকটি চালু নেই। পানির ট্যাংকটি ১০-১২ বছর আগে নির্মাণের পর থেকে এখনো চালুই হয়নি,
অকেজো পড়ে রয়েছে। ট্যাংকটি কোনোদিন চালু না হওয়ায় এখান থেকে সুপেয় পানির সুবিধা আমরা
পাচ্ছি না। সরকার কয়েক কোটি টাকা খরচ করে ট্যাংক নির্মাণ করেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের
গাফিলতির কারণে এটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্টটি নির্মাণ
না হওয়ায় যেসব পাম্প বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি ছিল, সেগুলো এখন হারিয়ে গেছে। ট্যাংক চালু
না হওয়ায় শহরের পূর্ব এলাকার সিও কলোনি ও বাসস্ট্যান্ড থেকে দূরের ট্যাংক থেকে পানি
সরবরাহ করা হয়। অনেক সময় পানের অযোগ্য পানি সরবরাহ করা হয়।
পৌরসভার ২ নম্বর
ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাহেদুল ইসলাম সোহেল বলেন,
‘সবকিছুই বরাদ্দ ছিল, কিন্তু বিগত সময়ে
মেয়রের গাফিলতি ও দুর্নীতির কারণে ট্যাংকটি চালু হয়নি। যারা দুর্নীতি করেছে, তাদের
বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
পৌরসভার সহকারী
প্রকৌশলী (পানি শাখা) খালেদুল হক জানান, প্রকল্পের আওতায় শুধু ট্যাংক নির্মাণ করা হয়েছে।
পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট করা হয়নি। এজন্য ওই ট্যাংক দিয়ে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।
প্লানটি নির্মাণ করা হলে ওই অঞ্চলের অধিকসংখ্যক মানুষ সুপেয় পানি পাবে, পৌরসভার রাজস্ব
আহরণও বাড়বে।
এপ্রসঙ্গে পৌরসভার
প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ রায়হান বলেন, ‘আমি সদ্য প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি।
বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।