পটুয়াখালীর বাউফল সরকারি কলেজের ছাত্র মেহেদি হাসানের শখের নার্সারি বদলে দিয়েছে তার জীবন। ২০১৮ সালে মাত্র লক্ষাধিক টাকা নিয়ে ৬০ শতাংশ জমিতে শুরু করেন নার্সারি। বর্তমানে তার চারটি নার্সারি রয়েছে।
মেহেদির নার্সারী বাগানের অনুভূতি ছোটবেলা থেকে গাছের প্রতি ভালোবাসা। কোথাও গাছ পেলে সেই গাছ রোপণ করতেন বাড়ির আঙিনায়। শুরুতে শখের বসে নার্সারি করার স্বপ্ন। পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট পরিসরে গাছ রোপণ করেন। সেখান থেকেই গাছের চারা রোপণ করার বিভিন্ন পদ্ধতি আয়ত্ব করা শুরু করেন মেহেদি। এই নার্সারিতেই আয়ের উৎস খুঁজে পান মেহেদি। এরপর আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। এখন অনেকেই তার নার্সারিতে গাছ কিনতে আসেন। আছে ঔষধি, বনজ ও ফলজ গাছসহ প্রায় ২০০ প্রজাতির গাছ। সকল চারা গুলো উৎপাদিত হয় আধুনিক প্রক্রিয়ায়।
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মদনপুরা ইউনিয়নে চন্দ্রপাড়া গ্রামে প্রায় ২ বিঘা জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও চারা নিয়ে বড় পরিসরে তার নার্সারি বাগান। খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে নার্সারিতে লাভের মুখ দেখতে পান তিনি। ধীরে ধীরে নার্সারিতে গাছের প্রজাতির সংখ্যা বাড়াতে থাকেন। সময়ের সাথে সাথে মান ভালো হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে চারা কিনতে আসেন অনেকে। কেউ কেউ গাছের বাগান ঘুরে দেখেন, কেউ গাছ কিনে নেন। শখের নার্সারি একসময় বাণ্যিজ্যিকভাবে শুরু করেন।
নার্সারিতে আমের জাতের মধ্যে সূর্যডিম, হাড়িভাঙ্গা, ল্যাংড়া, আম্রপালি, হিম সাগর, গুটি ফজলসহ প্রায় ৫৮টি জাতের চারা রয়েছে। ফুলের মধ্যে থাই গোলাপ, রজনীগন্ধা, চায়না টগর, হাসনাহেনা, বকুল, কামিনি, কৃষ্ণচূড়াসহ প্রায় শতাধিক প্রজাতির চারা রয়েছে। এছাড়াও আছে বিভিন্ন প্রজাতির ইনডোর প্লান্ট, ঘৃতকুমারী, আরবিকা কফি, মুক্তার স্ট্রিং, অ্যাসপারাগাস ফার্ন, ক্যাকটাস, কুমির ফার্ন ,জেড প্যান্ট, অ্যান্থুরিয়াম প্লান্ট, পাইলিয়া, স্নেক প্যান্ট।
এছাড়াও নার্সারীতে বোম্বাই মরিচ, বেগুন ও পেপে চাষ করে প্রতিদিনই প্রায় ৫-৭ টাকার পণ্য বাজারজাত করেন উপজেলার বিভিন্ন বাজারে। বর্তমানে মদনপুরা ইউনিয়নের চন্দ্রপাড়া গ্রামে প্রায় ৩৯০ শতাংশ জমিতে চারটি আলাদা নার্সারি করে সফলতায় পৌছে গেছেন মেহেদি। এতে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে আনেক বেকার যুবকদের।
তিনি দৈনিক আজকের দর্পণকে জানান, বর্তমানে ৩৯০ শতাংশ জমিতে নার্সারি তার রয়েছে। এ বছর এই জায়গায় বিভিন্ন বনজ, ফলদ, ঔষধি ও ফুলের চারা রোপণ করেছেন। এর মধ্যে এবছর তিনি তার নার্সারিতে পেপে, বেগুন ও বোম্বাই মরিচ বিক্রি করেন। তার বাগানে ভিয়েতনাম ও বার্মার, থাইল্যান্ড, চায়নার ও বিভিন্ন প্রজাতির চারা রয়েছে। এছাড়াও নার্সারিতে প্রায় দুই শতাধিক প্রজাতির বনজ ও ফলজ গাছ রয়েছে।
তিনি আরও জানান, শকের বশে তিনি নার্সারি শুরু করলেও এখন এই নার্সারিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন চাকুরি কোন ইচ্ছার তার নেই তার স্বপ্ন এই কৃষি নিয়ে। পরিবারের অভাব-অনটনেও কখনোই নার্সারির স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়নি। তার বাবা ও বড় ভাই তার কাজে প্রতিনিয়ত সাহায্য করে যাচ্ছে। এই নার্সারিতে কর্মসংস্থান হয়েছে এলাকার বেশকিছু বেকার যুবকের। নার্সারির জন্য তারা ভাগ্যের চাকাটা ঘুরিয়েছেন। প্রতিনিয়তই উপজেলা কৃষি তথ্য অফিসের সাহায়তায় তা এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, চারা উৎপাদনে কৃষি কর্মকর্তারা তাকে সঠিক গাইডলাইন দিচ্ছে, নিয়মিত তার নার্সারি ভিজিট করছে।
নার্সারিতে ঘুরতে আসা রাজিব সাহা বলেন, ‘আমি একজন গাছপ্রেমী মানুষ। বাসার ব্যালকনি ও বাড়ির আঙিনায় গাছ লাগাতে আমার ভালো লাগে। আমি এখান থেকে প্রায় সময়ই গাছ সংগ্রহ করে থাকি। আজকেও একটা গোলাপ গাছ নিলাম। তার নার্সরির উৎপাদিত চারার মান খুব ভাল ও দাম বাজার তুলনায় আনেক টাই কম ’
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো: আনছার উদ্দিন মোল্লা জানান, কলেজ ছাত্র মেহেদি হাসান যে নার্সারিগুলো করেছে এলাকায় তা প্রসংশা পাওয়ারযোগ্য। তার উদ্যোগের প্রতি আমাদের কৃষি দপ্তরের নজরে আছে। তিনি বিভিন্ন পর্যায় একাধিকবার প্রদর্শনীয় করেছে। তাকে পরামর্শসহ বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। মেহেদি হাসান মতো আরো কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।