ঋণসংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি আর জ্বালানিসংকটে
অন্তত আরও এক ডজন দেশ শ্রীলঙ্কার পথে হাঁটছে। অর্থনৈতিক সংকটে ইতিমধ্যে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া
হয়ে পড়েছে। এনডিটিভির এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কা, লেবানন, রাশিয়া, সুরিনাম
ও জাম্বিয়া এরই মধ্যে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে।
বেলারুশসহ আরো কিছু রাষ্ট্র সেই পথেই
হাঁটছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, অনেক রাষ্ট্র এখনো তাদের দেউলিয়া হওয়ার পরিস্থিতি এড়াতে
পারে, যদি বিশ্ববাজার স্থিতিশীল হয় এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) যদি তাদের
সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। ইতিমধ্যে উন্নয়নশীল অনেক দেশ আইএমএফের দ্বারস্হ হয়েছে। কিন্তু
দেশগুলোর আর্থিক সংকট এখন চরমে পৌঁছে যাচ্ছে। সংকটের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে আর্জেন্টিনা,
পাকিস্তান, ইউক্রেন, বেলারুশ, তিউনিশিয়া, ঘানা, মিশর, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, ইথিওপিয়া,
ইকুয়েডর এবং এল সালভাদর।
আর্জেন্টিনা:
বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, আর্জেন্টিনার সার্বভৌম
বন্ডের ৫০ শতাংশ খেলাপির খাতায় নাম লিখিয়েছে। দেশটির মুদ্রামানের ভয়াবহ পতন হয়েছে।
দেশটির মুদ্রা পেসো এখন ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টে কালোবাজারে লেনদেন হচ্ছে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত
অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার মতো পর্যাপ্ত তহবিল নেই দেশটির হাতে।
ইউক্রেন:
রাশিয়ার আগ্রাসনে দেশটি এখন বিপর্যস্ত।
দেশটি পুনর্গঠনে ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করতে হবে। দেশটির অর্থনৈতিক
ঝুঁকি নিয়ে ইতিমধ্যে মর্গান স্ট্যানলি ও আমুন্ডির মতো বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান সতর্ক
করেছে। ইতিমধ্যে দেশটি আন্তর্জাতিক বন্ডের পেমেন্ট পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে।
তিউনিসিয়া:
সংকটে থাকা তিউনিশিয়া ইতিমধ্যে আইএমএফের
দ্বারস্হ হয়েছে। দেশটির বাজেট ঘাটতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। মর্গান স্ট্যানলি তাদের তালিকায়
তিউনিশিয়ার নামও রেখেছে। ধারণা করা হচ্ছে, দেশটি আন্তর্জাতিক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হতে
পারে।
ঘানা:
আফ্রিকার দেশ ঘানার জিডিপির তুলনায় ঋণের
আকার ৮৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশটির মুদ্রামান এক-চতুর্থাংশ কমেছে।
দেশটির যে পরিমাণ রাজস্ব আহরণ হয়, তার অর্ধেক চলে যায় ঋণ পরিশোধে। দেশটির মূল্যস্ফীতি
এখন প্রায় ৩০ শতাংশ।
মিশর:
মিশরের জিডিপির তুলনায় ঋণের পরিমাণ ৯৫
শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে। জেপি মর্গানের হিসাবে, এ বছর দেশটিকে আন্তর্জাতিক ঋণের
কিস্তির জন্য ১১ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। আগামী পাঁচ বছরে দেশটিকে আরো ১০০ বিলিয়ন
ডলার পরিশোধ করতে হবে। ইতিমধ্যে দেশটির মুদ্রামান ১৫ শতাংশ কমিয়েছে। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ
হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে দেশটির।
কেনিয়া:
অর্থনৈতিক সংকট রয়েছে কেনিয়াতেও। দেশটির
যত রাজস্ব আদায় হয়, তার ৩০ শতাংশ চলে যায় সুদ পরিশোধে। দেশটির আন্তর্জাতিক বন্ডগুলো
দর হারিয়েছে প্রায় অর্ধেক।
এল সালভাদর:
বিট কয়েন প্রচলন করে সবচেয়ে বিপদে পড়েছে
দেশটি। এল সালভাদর দেশটির অভ্যন্তরে লেনদেনে বিট কয়েন বৈধ ঘোষণার পর তরতর করে পরে
যায় বিট কয়েনের দাম। দেশটির প্রচলিত আন্তর্জাতিক বন্ড ক্রয়ে এখন আস্থা কমে গেছে। পরিস্হিতি
এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, স্বল্পমেয়াদি বন্ডগুলো ৩০ শতাংশ এবং দীর্ঘমেয়াদি বন্ডগুলো
৭০ শতাংশ ডিসকাউন্টে বিক্রি করতে পারছে না।
পাকিস্তান:
আর্থিক সংকট কড়া নাড়ছে পাকিস্তানেও।
অতি সম্প্রতি দেশটি আইএমএফের ঋণও পেয়েছে। কিন্তু তার আগেই দেশটিতে সংকট শুরু হয়েছে।
জ্বালানির উচ্চমূল্যের কারণে দেশটিতে ব্যালান্স অব পেমেন্টে চাপ বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার
মজুত ৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। খরচ বাঁচাতে আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করা
হয়েছে। রুপির মানও রেকর্ড পড়ে গেছে। নতুন সরকার খরচ কমাতে নানা উদ্যোগ নিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু দেশটির যে রাজস্ব আদায় হয়, তার ৪০ শতাংশ ব্যয় হয় সুদ পরিশোধে।
একইভাবে ইথিওপিয়া, বেলারুশ, ইকুয়েডর, নাইজারের
অর্থনীতিও ঝুঁকিতে রয়েছে। নাইজারের রাজস্ব আয়ের ৩০ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে সুদ পরিশোধে।
লাতিন আমেরিকার দেশ ইকুয়েডর দুই বছর আগেই ঋণখেলাপি হলেও পরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু
সরকারবিরোধী আন্দোলনের কারণে দেশটির অর্থনীতি ফের চাপে রয়েছে।