শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
শরীয়তপুর জেলায় করোনার প্রভাবে টানা ছুটিতে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা মারাত্বক হুমকির মুখে রয়েছে। পড়াশুনা বাদ দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা মোবাইল গেমসে আসক্ত হয়ে পড়েছে। অভিভাবক মহল শঙ্কার কথা জানালেও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন শিক্ষা কার্যক্রম চলছে ও প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পুরোপুরি প্রস্তত রয়েছে তারা।
শরীয়তপুর জেলায় ৬৯৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এবং এতে পড়াশুনা করছে জেলার প্রায় ২ লক্ষাধিক কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী। যাদের আবার অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। করোনার কারণে বিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকাতে শিক্ষা ব্যবস্থা পড়েছে মহাসংকটে। শিশুরা আর আগের মত পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারছেনা। তারা এখন পড়াশুনা রেখে মোবাইল গেমসে আসক্ত হয়ে পড়েছে। যা শিশুদের দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অভিভাবকরা অভিযোগ করে জানান,‘স্কুল বন্ধ থাকার কারণে ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনার যে ক্ষতি হচ্ছে তা পূরণ করা সম্ভব না। সব কিছু খুলে দেওয়া হলেও স্কুলগুলো কেন খুলে দেওয়া হচ্ছে না?’
স্কুল বন্ধ থাকার কারণে বেহাল দশা স্কুলগুলোর। এমনই কিছু স্কুলের চিত্র এসেছে হাতে। এতে দেখা যায় স্কুলগুলোতে গবাদি পশু পালন করা হচ্ছে, রাখা হচ্ছে গবাদি পশুর খাবার। ফসল কেটে রাখা হচ্ছে স্কুলের আঙিনা ও ক্লাসরুমে।
অন্যদিকে জেলায় মোট কিন্ডারগার্টেন রয়েছে ১৮৫টি। প্রায় ৩৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রী এই কিন্ডারগার্টেন গুলোতে পড়াশুনা করে। অভিভাবকদের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে যাদের একটি বড় অংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিকে ঝুঁকে যাবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে চাপ বাড়বে। কিন্তু এই চাপ সামলাতে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, সহকারি শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৩৩২টি, প্রধান শিক্ষকের ২১৪ টি এবং বছরে গড়ে প্রায় ৬৫ জন শিক্ষিকা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকেন। এতে করে সারা বছর ধরে শিক্ষক সংকট লেগেই থাকে। এর উপর স্কুল খুলে দেওয়া হলে বাড়তি শিক্ষার্থীদের চাপ সামলাতে কতটা প্রস্তুত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জেলার শিক্ষাবিদরা। শরীয়তপুর জেলায় মাত্র ২ জন শিক্ষক দিয়ে চলে এমন বিদ্যালয় রয়েছে ১১টি। এছাড়াও ৩ জন শিক্ষক দিয়ে চলে এমন বিদ্যালয় রয়েছে অসংখ্য। অথচ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা মেনে পাঠ্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবী করেছেন জেলার শিক্ষকবৃন্দ।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার ৬৫ নং কীর্তিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার জন্য সহকারি শিক্ষিকা নাসরিন আক্তার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়া দেই, সীটে করে লেখা জমা নেই এবং তা মূল্যায়ন করি।
জেলা প্রাথমিক অফিসার মো: আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাদের পাঠদান থেমে নেই। ফিল্ড পর্যায়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমাদের সকল শিক্ষক স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। স্কুল খোলার জন্য আমরা প্রস্তত। সরকারি নির্দেশনা পেলেই আমরা যথাযথ নিয়ম মেনে স্কুল খুলে দিবো’।