ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে অভিনব প্রতারণার কৌশল অবলম্বন করেছেন জনৈক গোলাম ফারুক। তিনি পেছনের তারিখে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের অংশবিশেষের মালিকানা দেখিয়ে ব্যাংকের চোখে ধুলা দিয়েছেন। রাজধানীতে একটি হত্যা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এই প্রতারককে আটক করেছে র্যাব।
র্যাব জানিয়েছে, ১৯৪৮ সালে সরকারের অধিগ্রহণের আগের তারিখ দেখিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কিছু অংশ ৩০ হাজার টাকায় কেনেন গোলাম ফারুক। স্ত্রীর নামে ভুয়া দলিল করেন। ব্যাংক থেকে নেওয়া ১৫ কোটি টাকার ঋণের বিপরীতে সেই জমি বন্ধক রাখেন। অভিনব এই প্রতারক ও তাঁর সহযোগী ফিরোজ আল মামুনকে রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
আজ শুক্রবার কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, সম্প্রতি মেরুল বাড্ডা এলাকায় জাল দলিলসংক্রান্ত বিরোধের কারণে পরস্পর যোগসাজশে একটি হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীকে নিজ জমি থেকে উৎখাত করার উদ্দেশ্যে হত্যার হুমকি দেন গোলাম ফারুক ও তাঁর প্রধান সহযোগী ফিরোজ আল মামুন গংরা। ভুক্তভোগী আদালতে একটি নালিশি মামলার আবেদন করলে বাড্ডা থানায় মামলা রুজু হয়। সেটির তদন্ত করতে গিয়েই এই চক্র সম্পর্কে খোঁজখবর পায় র্যাব।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র্যাব জানিয়েছে, তাঁরা রাজধানীর বাড্ডায় হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, জালিয়াতি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন। এ ছাড়া মহাসড়কের জমি ক্রয়-বিক্রয় করে প্রতারণামূলকভাবে ব্যাংকে বন্ধক দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার কথাও স্বীকার করেছেন।
র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গোলাম ফারুক জানিয়েছেন, ২০০০ সাল থেকে গাড়ি আমদানিকারক হিসেবে ব্যবসা শুরু করেন। একটি বেসরকারি ব্যাংকে বন্ধকি সম্পত্তি ছাড়াই এলসি আবেদন করে গাড়ি আমদানি শুরু করেন। বিদেশি ব্যাংকের টাকা পরিশোধের বাধ্যবাধকতা থাকায় বেসরকারি ব্যাংকটি আমদানি করা গাড়ি বিক্রি করে ঋণের অর্থ পরিশোধ করার শর্তে তাঁকে ৭ কোটি টাকা ডিমান্ড লোন দেয়। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংক তাঁকে সম্পত্তি বন্ধক দেওয়ার জন্য চাপ দিলে সরকারি জমির মালিকানা দেখানোর ফন্দি আঁটেন।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ১৯৪৮ সালে সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণ করা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরার আজমপুর অংশের জমির মূল মালিকের ছেলেকে খুঁজে বের করেন। সেই ব্যক্তির কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকায় জমিটি কিনে নেওয়ার চুক্তি করেন। ২০০৬ সালে তিনি স্ত্রীর নামে এই জমির ভুয়া দলিল তৈরি করেন। সরকার অধিগ্রহণ করার আগেই মূল মালিকের ছেলের কাছ থেকে জমিটি কিনেছেন বলে দলিলে উল্লেখ করা হয়।
র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, পরে ভুয়া দলিলটি ওই ব্যাংকে বন্ধক দিয়ে আরও ১৫ কোটি টাকা ঋণ নেন গোলাম ফারুক। ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৩ সালে ব্যাংক অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে বন্ধকি জমি নিলামে বিক্রির নোটিশ জারি করে। ব্যাংক থেকে তখন সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জমিটি সরকারি। পরে ঘটনাটি একাধিক গণমাধ্যমে এলে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে জমিজমা সংক্রান্ত প্রতারণা, হত্যাচেষ্টা, এনআই অ্যাক্ট, জালিয়াতি ইত্যাদি অপরাধে রাজউকের একটি, একটি বেসরকারি ব্যাংকের চারটি এবং সাধারণ মানুষ বাদী হয়ে তিনটিসহ মোট আটটি মামলা রয়েছে।