প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশে আজ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। আর যে কাজগুলো করে দিচ্ছি সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ, যত্ন করতে হবে। সরকারি মাল দরিয়ামে ঢাল বললে হবে না। সরকার কিন্তু চলে জনগণের পয়সায়। সরকার করে দেয় কিন্তু জিনিসটা জনগণের। এটা মাথায় রাখতে হবে। সেভাবে যত্নশীল হতে হবে।’
রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস ২০২৪’ অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের কাছে দেওয়া ওয়াদা রক্ষা করুন। কমিশনের কথা চিন্তা করে প্রকল্প নেওয়া যাবে না। জনগণ ও প্রকৃতি-পরিবেশের কথা মাথায় রেখেই প্রকল্প নিতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে অর্থ সাশ্রয় করে কাজ করতে হবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘দেশে ভূমি ও গৃহহীন মানুষ থাকবে না। প্রথমে বিভাগ, তারপর জেলা পর্যায়ে খাদ্য সংরক্ষণাগার করা হবে। দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। শুধু নেয়ার জন্য কোনো প্রকল্প নেবেন না; জনগণের কাজে লাগে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণের দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। জলাধার যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। যারা বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন, তাদের বিদ্যুৎ বিল অন্যদের চেয়ে বেশি হবে। অর্থাৎ তাদের বিদ্যুতের রেট অন্যদের চেয়ে বেশি হবে। নির্দিষ্ট ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারে কম বিল দেবেন স্বল্প আয়ের ব্যবহারকারীরা।’
এসময় তিনি বলেন, ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে।’ সমন্বিত চাষাবাদ বা সমবায়ের মাধ্যমে চাষাবাদের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেক এলাকায় মাস্টারপ্ল্যান করে কাজ করলে জমির উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও উৎপাদিত পণ্যের যথাযথ বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।’ সবাইকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
জনপ্রতিনিধিদের সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আশ্রয়ণসহ বিভিন্ন প্রকল্পে পুনর্বাসিতদের খোঁজ খবর রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের অনেক দায়িত্ব আছে। সরকারি কর্মচারীরা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চাকরি করে। জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। আজকে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কারও কাছে মাথা নিচু করে আমরা চলব না। মাথা উঁচু করে চলতে হবে আমাদের।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলব। আমরা কম্পিউটার ট্রেনিং দিচ্ছি। শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। প্রতিটি স্কুলের উন্নয়ন করে দিচ্ছি। প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। বহুমূখী বিশ্ববিদ্যালয় করে শিক্ষার মান উন্নত করে দিচ্ছি। এতো কিছু করছি এদেশের মানুষের জন্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ জাতিসংঘ ঘোষিত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল সেটাও যেমন আমরা অর্জন করব, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ, দক্ষ জনশক্তি, দক্ষ সরকার, দক্ষ অর্থনীতি, দক্ষ সমাজ আমরা গড়ে তুলব। আমাদের সব কিছুই হবে স্মার্ট।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২১০০ সালের ডেল্টা প্লান করে দিয়েছি। তাও বাস্তবায়ন শুরু করেছি। জলবায়ুর অভিঘাত থেকে এই ব-দ্বিপকে রক্ষা করে আমাদের দেশের মানুষের উন্নয়নের অভিযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম সুন্দর জীবন পায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’