শ্রীপুর(গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ
স্ট্রবেরি সারা বিশ্বের জনপ্রিয় একটি ফল। দেখতে কিছুটা লিচুর মতো, দৃষ্টিনন্দন, সুদর্শন, সুঘ্রান ও সুস্বাদু এ ফলটি জীবনরক্ষাকারী নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এটি বীরুৎ জাতীয় বহু বর্ষজীবি উদ্ভিদ। শীত প্রধান দেশের ফসল হলেও বর্তমানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্ট্রবেরী চাষ করা হচ্ছে। সারা দুনিয়ায় নানা জাতের স্ট্রবেরী চাষ হলেও দীর্ঘ দিবাজাত, স্বল্প দিবা জাত ও দিন নিরপে জাতের চাষ বেশী হয়। স্ট্রবেরি চাষ করে ভাগ্য বদলে ফেলেছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তোফায়েল আহমেদ নামের এক যুবক। ৫০ শতক জমিতে চাষ করেছেন স্ট্রবেরি। ইতিমধ্যে ফল পাকতে শুরু করেছে। দৈনিক ১৫-২০ কেজি স্টবেরি তোলেন জমি থেকে। প্রতিকেজি স্ট্রবেরি ৭ শত থেকে ৮ শত টাকা কেজি বিক্রি করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি সাড়ে তিন লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন। তিনি প্রায় ৭ হাজার স্ট্রবেরির চারা রোপণ করেছেন। স্টবেরি চাষি তোফায়েল আহমেদের ঘরে এখন বইছে স্বাচ্ছন্দ্যের ফোয়ারা।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নিভৃত পল্লী গোদারচালা গ্রামের স্বল্প শিক্ষিত যুবক তোফায়েল আহমেদ। এক সময় বেকারত্বে দিন কাটত তার। মাথায় চিন্তা ছিল চাকুরী নয় একসঙ্গে নিজ উদ্যোগে সৃষ্টিশীল কিছু করার। তিনি কৃষক ঘরের সন্তান। তাই এসএসসি পাশ করার পর কৃষিক্ষেত্রকেই তিনি কর্মসংস্থানের উপযুক্ত পথ হিসেবে বেছে নেয়। কৃষি প্রধান এলাকা হিসেবে উপজেলার তেলিহাটিতে ধানের পাশাপাশি সবজি চাষের সফলতা অনেক আগের। কিন্তু পরীক্ষামূলকভাবে এ এলাকায় দ্বিতীয় বারের মতো শুরু হওয়া স্থানীয় এ যুবকের স্ট্রবেরি চাষ করা দেখে এলাকার অনেক কৃষক উদ্বুদ্ধ হয়েছে। ব্যয়বহুল হলেও তোফায়েলের পর ১ বিঘা জমিতে ষ্ট্রবেরী চাষ করে সোহাগ নামের স্থানীয় এক কৃষকের সফলতায় এ এলাকায় সাধারণ কৃষকের মাঝে উৎসাহ বহুগুণে বেড়ে যায়। তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয় ষ্ট্রবেরী চাষের।
ওই কৃষক জানান, অনেক টাকা পয়সা খরচ করে একটি পেঁপের বাগান করেছিলাম। গত মৌসুমে শীলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যায়। এতে আমার অনেক লোকসান হয়েছিল। তাই এবার আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি স্ট্রবেরি চাষ করবো। এখন আমার স্ট্রবেরি চাষ দেখে এলাকার অনেক কৃষক আগামী মৌসুমে স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করে করেছেন। এই সফলতা দেখে প্রতিদিন তাদের স্ট্রবেরি দেখার পাশাপাশি চারা নিতে আসছেন অনেক যুবক। জানতে চাচ্ছেন তাদের সফলতার কথা।
সরেজমিনে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের গোদারচালা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এক যুবক গড়ে তুলেছেন স্ট্রবেরির বাগান। ক্ষেতের পাশেই টানানো সাইনবোর্ড। তাতে বড় করে লিখা আছে ‘রেডগ্রীন স্ট্রবেরি ভিলেজ’। শীতের ফসল এই স্ট্রবেরির বর্তমান মৌসুম প্রায় শেষ। তারপরও শ্রমিকদের ব্যস্ততা কমেনি। ক্ষেত পরিচর্যার পাশাপাশি অবশিষ্ঠ স্ট্রবেরি সংগ্রহের কাজ এখনও চলছে। এ সময় ক্ষেতেই দেখা মেলে উদ্যোমী এ যুবকের। কথা হয় তার সফলতা নিয়ে। তিনি জানান, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই স্ট্রবেরি সংগ্রহের কাজ শেষ করে তারা মনোযোগ দেবেন চারা তৈরির কাজে। আগামী শীতের আগেই পাঁচ লাখ চারা বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এখন তারা কাজ করছেন। শুরু নিয়ে তিনি জানান, এসএসসি পাশ করার পর থেকেই তাদের মনে সুপ্ত বাসনা ছিল উল্লেখযোগ্য একটা কিছু করার।
গত জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে প্রতিদিন ৪০-৬০ কেজি স্টবেরি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এভাবে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তারা ৫ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেন। এতে তাদের খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। বড় অঙ্কের টাকা খাটিয়ে গড়ে তোলা এই প্রকল্প নিয়ে অনেকেই তামাশ করেছেন, সফলতা আসবে না বলে অনেকেই ভয়ও দেখিয়েছেন। কিন্তু সব কিছু উপেক্ষা করে মাত্র ৬ মাসে তাদের আয় হয়েছে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। এ ছাড়া তাদের সফলতা দেখে প্রতিদিন পরামর্শের পাশাপাশি চারা কিনতে আসছেন অসংখ্য মানুষ। তাই তাদের আশা আগামী মৌসুমের আগেই ৫ লাখ চারা সরবরাহ করে তাদের আয় হবে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। তার সাফল্য দেখতে আসেন শ্রীপুরের মাওনা উত্তরপাড়া এলাকার কৃষক সামাদ, কবির। কথা হয় তাদের সঙ্গেও। তারা বলেন, লাভজনক জেনে আগামীতে তারাও ষ্ট্রবেরী চাষ করবেন। তাই তারা পরামর্শের পাশাপাশি চারা কেনার বন্দোবস্ত করতে এখানে এসেছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা মূয়ীদুল হাসান বলেন, অনেকে শখে বাসা-বাড়িতে স্ট্রবেরির চাষ করলেও এখন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরির চাষ হচ্ছে। এ চাষ লাভজনক বিধায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।
এ প্রসঙ্গে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মাহবুব আলম জানান, স্ট্রবেরি ফলের মধ্যে উচ্চমাত্রায় পুষ্টি রয়েছে। এ ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি রোগমুক্তিতেও সহায়তা করে। গাজীপুরে স্ট্রবেরির চাষ হলেও আমরা এর পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারিনি।