সুদানের সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনী
র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে চলমান লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত চার শতাধিক মানুষ
প্রাণ হারিয়েছেন। সৃষ্টি হয়েছে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির। হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে রাজধানী
খার্তুমে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদের বাসভবন।
এমন পরিস্থিতিতে সুদানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের
মধ্যে যারা দেশে প্রত্যাবর্তন করতে চায় তাদেরকে খার্তুমের বাংলাদেশ দূতাবাসের
হটলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পোস্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ প্রত্যাবর্তনে
ইচ্ছুক সুদানে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের বাংলাদেশ দূতাবাসের হটলাইন নাম্বারে
দ্রুত যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
হটলাইন নাম্বারগুলো হলো
মো. ইকরামুল হক (তৃতীয় সচিব)
+২৩৪ ৯০৯ ৭৫৫ ১৭৯০
মো. জাহাঙ্গীর আলম (প্রশাসনিক কর্মকর্তা)
+৮৮০১৭৩৭১২৫৩৪৯
সুদানে বিবদমান নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের
মধ্যে গত ১২ দিনে কমপক্ষে দুবার আক্রান্ত হয়েছে রাজধানী খার্তুমে অবস্থিত বাংলাদেশ
দূতাবাস ও রাষ্ট্রদূতের বাসভবন। ১৫ ও ২২ এপ্রিল ভবনগুলোর কয়েকটি স্থানে দেয়াল ও জানালা
ভেদ করে ভেতরে এসে পড়ে মেশিনগানের গুলি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ২০ এপ্রিল রাষ্ট্রদূত
সপরিবারে দূতাবাস ও বাসস্থান ছেড়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে চলে যান।
বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে ফেরানোর প্রস্তুতি
শুরু হয়েছে বলে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ গতকাল বুধবার আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সুদান থেকে বাংলাদেশিদের ফেরিতে করে প্রথমে
সৌদি আরবের জেদ্দায়, সেখান থেকে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় নিয়ে আসার কথা ভাবছে সরকার। পুরো
বিষয়টি জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ঢাকা অফিসকে অবহিত করা হয়েছে।
তারেক আহমেদ জানান, তিন দিন আগে যুদ্ধবিরতি
শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মানুষ দেশে ফিরতে
নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত এই ৫০০ লোকের সবাই ফিরবেন কি না, সে ব্যাপারে
সংশয় আছে।
যাঁরা নিবন্ধন করেছেন, তাঁদের কবে নাগাদ
সরিয়ে নেওয়া শুরু হতে পারে, জানতে চাইলে তারেক আহমেদ বলেন, কয়েকটি দেশ ২২ থেকে ২৫ এপ্রিলের
মধ্যে নিজেদের নাগরিকদের খার্তুম থেকে বন্দরনগরী পোর্ট সুদানে সরিয়ে নিয়েছে। সেখানে
হাজার হাজার মানুষের থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। আবার তাঁদের বন্দরে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে
জাহাজেও তোলা যায়নি। এ অবস্থায় কয়েক হাজার বিদেশি মানুষের সেখানে থাকা-খাওয়াসহ আনুষঙ্গিক
সবকিছু নিশ্চিত করা নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশের নাগরিকেরা কবে নাগাদ জাহাজে
উঠতে পারবেন, তা নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁদের সরাসরি বন্দরে নিয়ে গেলে ভোগান্তি কিছুটা
কমানো যেতে পারে- এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে খার্তুম থেকে
বাসবহর ছাড়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা দেশে ফিরবেন, তাঁদের
অনেকের হালনাগাদ পাসপোর্ট নাও থাকতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সে ক্ষেত্রে
তাদের বিকল্প হিসেবে ‘ট্রাভেল পারমিট’ দেওয়া প্রয়োজন
হতে পারে। এ ক্ষেত্রেও অন্তত দুই দিন লাগতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান,
খার্তুম থেকে বাসে পোর্ট সুদান, সেখান থেকে জাহাজে জেদ্দা, এরপর জেদ্দা থেকে ঢাকাগামী
ফ্লাইটে যাত্রীদের তোলা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অপেক্ষার সময় যতটা সম্ভব কমিয়ে সব প্রস্তুতি
সম্পন্ন করতে সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে।
উল্লেখ্য, সুদানে প্রায় ১ হাজার ৫০০ বাংলাদেশি
নাগরিক আছেন।