মৌলভীবাজার
জেলা জুড়ে সবক’টি নদীর পানি
বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আজ শুক্রবার
বিকাল থেকেই একের পর এক এলাকায় নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভাঙার খবর আসে। ৩য় দফা আকস্মিক
বন্যায় নাকাল এ জেলার নদী ও হাওর তীরের বাসিন্দারা। নদীর বাঁধ ভেঙে ও উপচে কুলাউড়া,
কমলগঞ্জ, রাজনগর, জুড়ী, মৌলভীবাজার সদরসহ সবক’টি উপজেলার প্রায় আড়াই শতাধিক গ্রামের অন্তত সাড়ে ৩ লক্ষাধিক মানুষ বন্যাকবলিত
হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই কেবলই বাড়ছে বন্যায় দুর্গতদের এই
পরিসংখ্যান।
জানাযায়, মনু,
ধলাই ও ফানাই নদীর প্রায় ২০টি স্পটে বাঁধ ভেঙে ও উপচে বানের পানি তীরবর্তী গ্রাম এলাকায়
প্রবেশ করে দ্রুত সময়েই সবকিছুই তলিয়ে দেয়। এ ছাড়াও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে ওই সকল নদীর
আরও একাধিক স্পট। মনু নদীর বাঁধ ভাঙনে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার অধিকাংশ মানুষ। কুশিয়ারা
ও জুড়ী নদীর বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করায় তীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা পানিবন্দি
হয়ে পড়েছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট,
কৃষি ক্ষেত সবকিছুই গ্রাস করে বানের পানি। এখন সময় যত যাচ্ছে ততই ভয়াবহ হচ্ছে বন্যা
পরিস্থিতি।
জেলার হাকালুকি,
কাউয়াদীঘি ও হাইল হাওরের তীরবর্তী এলাকারও বন্যা পরিস্থিতি চরম অবনতির দিকে। ৩য় বারের
মতো তারাও বন্যায় কবলিত হচ্ছেন। এখন জেলার ৭ উপজেলার বাসিন্দারা কমবেশি বন্যা আক্রান্ত
হচ্ছেন। জেলার নদী ও হাওর তীরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীরা বুধবার বিকাল থেকেই
নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য অন্যত্র ছুটছেন। জেলা শহরের মনু নদী তীরবর্তী এম সাইফুর রহমান
সড়ক এলাকায় বাঁধ ভাঙার ঝুঁকি থাকায় মৌলভীবাজার এম সাইফুর রহমান রোড বাটার মোড় হতে পোস্ট
অফিস পর্যন্ত শুক্রবার এবং শনিবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। গভীর রাত পর্যন্ত
ব্যবসায়ী নিজেদের মালামাল নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে দেখা যায়। সারা রাত জেগে বালুভর্তি
জিওব্যাগ ফেলে প্রতিরক্ষা বাঁধ শক্তিশালী করতে
বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা নিরলস কাজ করেন। ওই সড়কটিতে যান চলাচল
আপাতত বন্ধ রয়েছে।
মৌলভীবাজার
সদর উপজেলার ০৭ চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের ০১ ওয়াড ডেউপাশা আশরাফ মিয়ার বাড়ির সম্মুখে নদীর
বাধ বেশ ঝুকিপূর্ণ রয়েছে এ ছাড়াও মৌলভীবাজার-কুলাউড়া
সড়কের কদমহাটা এলাকায় সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। মৌলভীবাজার-কমলগঞ্জ
সড়কের মাতারকাপন এলাকায়ও সড়কে পানি উঠে যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতিতে
জেলা জুড়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়ছেই। প্রতি ঘণ্টায় বাড়ছে নদী ও হাওরের পানি। স্থানীয় বাসিন্দারা
অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন। নিজেদের খাবার ও নিরাপদ আশ্রয়ের সঙ্গে গৃহপালিত গবাদিপশুদের
নিয়েও চরম দুশ্চিন্তায়।
একাধিক আশ্রয়কেন্দ্র
ঘুরে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে। কদমহাটা উচ্চ বিদ্যালয় ও কদমহাট সরকারি প্রাথমিক আশ্রয়কেন্দ্রের মাসুক মিয়া
(৬৫), কামাল মিয়া (৪৬), ছফিয়া বেগম (৩৮) ও মো. হাসান মিয়া (৩৬) জানান, গত বুধবার বিকাল
থেকেই ওখানে তারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। সঙ্গে গবাদিপশুও। বৃহস্পতিবার
দুপুর পর্যন্ত তারা কোনো ধরনের সহায়তা পাননি। নিজের ও গবাদিপশুগুলোর খাবার নিয়ে চরম
দুশ্চিন্তায়। আশ্রয়কেন্দ্রের সকলেই তাদের এই চরম দুর্দিনে সরকারের পাশাপাশি প্রবাসী
ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আকুল আহ্বান জানান।
জানা যায়, মনু
নদীর (রেলওয়ে ব্রিজ) পানি বিপদসীমার ৭৫ সে. মি. উপর দিয়ে ও মনু নদীর (চাঁদনী ঘাট) পানি বিপদসীমার ১১৯ সে.
মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদীর (রেলওয়ে ব্রিজ) ২৮ সে. মি. উপর দিয়ে, কুশিয়ারা
নদীর (শেরপুর) বিপদসীমার ১০ সে. মি. উপর দিয়ে ও জুড়ী নদী বিপদসীমার ১৯৪ সে. মি. উপর
দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন
সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত জেলার কুলাউড়ায় ১টি, রাজনগরে ৭টি ও সদর উপজেলায় ৮টি আশ্রয়কেন্দ্র
খোলা হয়েছে। অন্যান্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও প্রস্তুত
রয়েছে। এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া লোকসংখ্যা ৪৩২৫ জন। ২৫টি মেডিকেল টিম
কর্মরত রয়েছে।
ইতোমধ্যে ২৮৫
টন চাল ও ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা জিআর খাত হতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকারি সহায়তা ছাড়াও
জেলা জুড়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর
নেতাকর্মীরা বন্যার্তদের উদ্ধার, আশ্রয়কেন্দ্রে খাদ্য বিতরণসহ সার্বিক সহযোগিতায় মাঠে
সক্রিয় রয়েছেন।