বিরল সামুদ্রিক পাখি পাফিন ও গানেটের সুরক্ষা নিশ্চিতে একটি উদ্বেগজনক ফাঁক রয়ে গেছে। এজন্য ব্রিটিশ সরকারকে দায়ী করা হচ্ছে। ফাঁস হওয়া এক তথ্য থেকে এমন কথা জানা গিয়েছে। পরিবেশবিদরা অভিযোগের আঙুল তুলছেন মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে। কারণ তারা যুক্তরাজ্যের সামুদ্রিক প্রাণীর সুরক্ষা বিষয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছেন। দুর্লভ প্রজাতিগুলোর সংরক্ষণে কোনো আইনি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির আবেদন করেছে তারা। খবর দ্য গার্ডিয়ান।
প্রতি বছর সামুদ্রিক পরিবেশ এবং এর ভেতরে থাকা বন্যজীবন রক্ষার জন্য কিছু লক্ষ্য গ্রহণ করে ব্রিটিশ সরকার। সেসবেরই একটি ছিল সামুদ্রিক পাখি বিলীন হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করা। যুক্তরাজ্যের ২৫টি প্রজননকারী সামুদ্রিক পাখির প্রজাতির মধ্যে ২৪টিকে সংরক্ষণবিষয়ক পাখির তালিকায় লাল বা অ্যাম্বার মার্যাদা দেয়া হয়েছে। মানে প্রজাতিগুলো স্থানীয়ভাবে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে।
অনুসন্ধানে গার্ডিয়ান দেখেছে, যুক্তরাজ্যের সামুদ্রিক কৌশলে সরকার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সামুদ্রিক প্রাণী রক্ষার বিষয়ে আইন প্রয়োগের ব্যতিক্রম করার প্রচেষ্টার লক্ষণ প্রকাশ করেছে। ২০১২ সালে প্রকাশিত ওই কৌশল অনুসারে, এমন কিছু আইন প্রয়োগের কথা বলা হয় যেন ১৫টি পদক্ষেপ নেয়া যায়। যে পদক্ষেপগুলো ২০২০ সালের মধ্যে ভালো পরিবেশগত পরিস্থিতি অর্জনে সহায়তা করবে। ওইসব লক্ষ্যের মধ্যে একটি ছিল সামুদ্রিক পাখির হ্রাস রোধ করা। এখন পর্যন্ত দেখা গিয়েছে, যুক্তরাজ্য তার লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ১১টি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। সেই সঙ্গে ২০১২ সালের সামুদ্রিক পাখির হ্রাস রোধ করার লক্ষ্যের শুরুর বিন্দু থেকে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে সামুদ্রিক পাখির সংখ্যা চার দশকে ২৫ শতাংশেরও বেশি কমে গিয়েছে। ১৯৮৬ সালে হারিয়ে যায় ২০ লাখ সামুদ্রিক পাখি। পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে দেখা গিয়েছে স্কটল্যান্ডে। সেখানে সংখ্যাটা কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে এ সময়ে। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পাখির বড় অংশের বাস যুক্তরাজ্যে। তার মধ্যে পাফিন, কিট্টিওয়েকস ও রেজরবিলসও রয়েছে। সামুদ্রিক পাখি দিয়েই মূলত সমুদ্র ও উপকূলীয় পরিবেশের স্বাস্থ্যের খোঁজ পাওয়া যায়। কারণ সেগুলোই তার মূল নির্দেশক।
রয়্যাল সোসাইটি ফর দ্য প্রটেকশন অব বার্ডের (আরএসপিবি) পরিচালক কেটি জো লাক্সটন বলেন, আমরা জানি লক্ষ্য বা ডেডলাইন দিয়ে সামুদ্রিক পাখির সংখ্যা বাড়তে দেখা যাবে না। কিন্তু সেগুলো নির্ধারণ করা সরকার সামুদ্রিক পাখি হ্রাস রোধে কী অর্জন করতে চায় সেটার লক্ষ্য নির্বাচন করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা সরকারকে আহ্বান জানাব যেন তারা সেসব ফাঁকির বিষয়ে আবার ভাবেন যেগুলো সামুদ্রিক পাখি বাঁচাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার না দেয়ার কারণ হতে পারে। যদি অনেক বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই সমুদ্রের পরিবেশ রক্ষা করাই যুক্তরাজ্যের মেরিন কৌশলের মূল উদ্দেশ্য হয়, তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায় সামুদ্রিক পাখির নির্দেশক অর্জন করার ব্যর্থতার ক্ষেত্রে কেন আমাদের সরকার দায়বদ্ধ হতে চায় না?