সভ্যতার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সূর্যের
বলয়ে পৌঁছে গেছে মানুষের তৈরি মহাকাশ যান ‘পার্কার সোলার
প্রোব’। শুধু তাই নয়,
সেখান থেকে কুড়িয়ে এনেছে নমুনাও। মহাকাশ বিজ্ঞানের ইতিহাসে এমন ঘটনা এবারই প্রথম।
আমেরিকার মহাকাশ সংস্থা নাসা সূর্যের বলয় স্পর্শ করার এ ঘটনাটিকে ঐতিহাসিক মুহূর্ত
হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। সূর্যের আবহাওয়ামণ্ডলের যে স্তরে সৌরযানটি পৌঁছেছে তার নাম
‘করোনা’।
জানা যায়, ‘পার্কার সোলার
প্রোব’ সূর্যের বলয়ে
পৌঁছেছে গত এপ্রিলেই। তবে নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ শেষেই সদ্য এই তথ্য নিশ্চিত হয়েছেন
বিজ্ঞানীরা।
পৃথিবীতে তৈরি কোনও মহাকাশযান তো বটেই,
কোনও বস্তুও প্রথম ছুঁয়ে দেখল সূর্যকে! মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা মঙ্গলবার
সূর্যকে ছোঁয়ার এই ঘোষণা দিয়েছে। চাঁদের অনেক কিছুই এতদিনে জানা সম্ভব হয়েছে। কাছের
আরেক গ্রহ মঙ্গলেও এখন যাতায়াত করা যায়। এবার কাছের আরেক নক্ষত্রকে আরও কাছ থেকে জানার
দরজা খুলল এবার। নাসার এই কৃতিত্বে বিজ্ঞানীরা এবার চাঁদ-মঙ্গলের মতো সূর্যের রহস্য
জানার অপেক্ষা করছেন।
সূর্যের বহিরাবরণ, যাকে ‘করোনা’ বলা হয়, তা ভেদ
করে সূর্যের ভেতরে প্রবেশ করেছে নাসার সৌরতদন্ত যান ‘পার্কার।’ এই করোনাকে
প্রচলিত কথাবার্তায় সূর্যের ‘উঠান’ বলা যায়। মূল
বাড়ি আর সদর দরজার মধ্যে যেমন একটা নিরাপদ দূরত্ব থাকে, অনেকটা সেই রকম। তবে এই এলাকার
মধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রবল এবং চৌম্বক ক্ষমতাও তীব্র। এতটাই ক্ষমতা ওই দুই শক্তির যে,
তা সৌরপদার্থকে বহিরাবরণ পেরিয়ে বের হতে দেয় না। নিরাপদে থাকে সৌরজগতের গ্রহ-উপগ্রহ।
পার্কার সেই চত্বরে প্রবেশ করেছে। শুধু
তা-ই নয়, সেখান থেকে সৌরপদার্থের নমুনাও সংগ্রহ করেছে। ২০১৮ সালে পৃথিবী থেকে সূর্যের
উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিল পার্কার। এর আগে বেশ কয়েক বার সূর্যের কাছাকাছিও পৌঁছেছে।
তবে এই প্রথম ওই মহাকাশযান সূর্যকে ছুঁয়ে দেখল। সংগ্রহ করল সৌরপদার্থ এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের
নমুনা।
একই সঙ্গে সূর্য কীভাবে পৃথিবী বা অন্য
গ্রহের বিবর্তনে সাহায্য করেছে, কীভাবে সূর্য নিজে তৈরি হয়েছে, পার্কারের এই সফল অভিযানে
তা-ও জানার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশা করছে নাসা।