সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের
প্রতিবাদে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডাকা সংবাদ সম্মেলন বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ
সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএইচআরএফ)।
মঙ্গলবার (১৮ মে) সকালে সংগঠন দুটির পৃথক
সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
বিএসআরএফ তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে,
দৈনিক প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার ও বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের
(বিএসআরএফ) সদস্য রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা করে গ্রেফতারের প্রতিবাদে আজকের (মঙ্গলবার)
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত সকাল ১১টার সংবাদ সম্মেলন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
পরবর্তী কর্মসূচি কার্যনির্বাহী কমিটির আজকের জরুরি সভা থেকে ঘোষণা করা হবে। এ বিষয়ে
সকলের সহযোগিতা কামনা করছে বিএসআরএফ।
একই কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিং
বয়কট করেছে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএইচআরএফ)।
দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা
ইসলাম এর বিপক্ষে অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করার
কথা ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি ঠিক রেখে সংবাদ কাভারেজের অনুরোধ
করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
প্রসঙ্গত, অনুমতি ছাড়া করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের
সরকারি নথির ছবি তোলার অভিযোগে দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে
পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখার পর শাহবাগ থানা পুলিশে সোপর্দ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সোমবার
(১৭ মে) রাত সাড়ে ৮টার পরে শাহবাগ থানা পুলিশের একটি টিম সচিবালয় থেকে সাংবাদিক রোজিনা
ইসলামকে নিয়ে যায়।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রোজিনা ইসলামের
বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সিব্বির আহমেদ ওসমানী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এদিন দুপুরে স্বাস্থ্য সচিব লোকমান হোসেন
মিয়ার একান্ত সচিব সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়ার অনুপস্থিতিতে অফিস কক্ষে ঢুকলে সাংবাদিক রোজিনা
ইসলামের বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের সরকারি নথির ছবি তোলার অভিযোগ
ওঠে।
সেখানেই টানা পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়
তাকে। এ বিষয়ে সচিবালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকেরা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের বক্তব্য
জানার চেষ্টা করেন। কিন্তু সচিবের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা
মাইদুল ইসলাম প্রধান সাংবাদিকদের বলেন, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু নথির ছবি তোলার
অভিযোগ এনে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পরিবারের সদস্যরা জানান, সোমবার
দুপুরে এক সোর্সের কাছ থেকে কিছু কাগজ সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান দৈনিক
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। এসময় স্বাস্থ্য সচিব তার কক্ষে না থাকায়
প্রথমে ঢুকতে না চাইলেও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অনুরোধে রুমে প্রবেশ করেন তিনি।
পরিবারের সদস্যরা আরও জানান, রুমে প্রবেশ
করে একটি পত্রিকা পড়তে শুরু করলে হঠাৎ করেই মন্ত্রণালয়ের সাত আটজন কর্মী রোজিনা ইসলামের
ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে কিছু কাগজপত্র ব্যাগে ঢুকিয়ে তার বিরুদ্ধে নথি চুরির অভিযোগ এনে
হেনস্তা শুরু করে।
এরপর দীর্ঘ প্রায় ছয় ঘণ্টা একটি কক্ষে
আটকে রাখার পর রাত সাড়ে আটটার দিকে শাহবাগ থানা পুলিশের একটি টিমের হাতে রোজিনা ইসলামকে
হস্তান্তর করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বিভিন্ন সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় পরিকল্পিতভাবে রোজিনা ইসলামকে ফাঁদে ফেলা হয়েছে বলেও অভিযোগ পরিবারের সদস্যদের। পুলিশ জানিয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে থানায় আনা হয়েছে। বর্তমানে সাংবাদিক রোজিনা উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের সমস্যায় ভুগছেন। শরীরে জ্বরও রয়েছে তার।