পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে অতিথি করা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংগঠিত সংঘর্ষে আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শেখর কুমার সিকদার (৫৫) নিহত হওয়ার ঘটনায় ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মিঠুন হালদারসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বুধবার এ ঘটনায় নিহত চেয়ারম্যান শেখর সিকদারের স্ত্রী মালা মন্ডল বাদী হয়ে এজাহার নামীয় ১৫ জন এবং অজ্ঞাত আরও ১০/১২ জনকে আসামী করে নেছারাবাদ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মামলার প্রধান আসামী আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার (৪৫), শংকর সরকার (৪৬), আমিনুল ইসলাম ওরফে বাকিবিল্লাহ (২৫), তাপস মজুমদার (৫০), স্বাধীন হালদার (৩২) ও বাবুল হাওলাদার (৫৫)। মামলার অন্য আসামীরা হলেন, পংকজ সরকার (৫৫), মো. জহির (৪৫), মনি বড়াল (৪০), বুলু মন্ডল (৪০), শান্তি বড়াল (৫০), সঞ্জিব মিস্ত্রী ওরফে মোডাই (৪৫), মিলন পাইক (৪২), স্বপন মন্ডল (৪৮), সঞ্জয় বিশ্বাস (৩৬)।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে র্যাব-৮ এর একটি দল চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার ও বাকিবিল্লাহকে সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে আটক করে। বাকি ৪ জন আসামীকে কুড়িয়ানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবার সকালে পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম (পিপিএম), অতিরিক্ত পুলিশ (অপরাধ) সুপার মুকিত হাসান খাঁন, নেছারাবাদের ইউএনও মনিরুজ্জামান, সহকারি পুলিশ সুপার সাবিহা মেহেবুবা ও নেছারাবাদ থানার ওসি গোলাম ছরোয়ারের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনার স্থান পরিদর্শন করে কুড়িয়ানা বাজার সংলগ্ন কেন্দ্রিয় দুর্গা মন্দিরে উপস্থিত এলাকাবাসীকে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে তাদেরকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানান। পরে পুলিশ সুপার ও অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা নিহত চেয়ারম্যানের বাসভবনে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন। দুপুরে নেছারাবাদ থানা প্রাঙ্গনে সাংবাদকিদের উদ্দেশ্যে প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম (পিপিএম)।
মঙ্গলবার বেলা আনুমানিক ১১ টার দিকে উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নের ৪২ নং কুড়িয়ানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মিঠুন হালদারের আগে ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শেখর সিকদারকে অতিথি করা নিয়ে দুই চেয়ারম্যান সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে সাবেক চেয়ারম্যান শেখর সিকদার সহ আরও ৪ জন আহত হন। স্থানীয়রা আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শেখর সিকদারকে মৃত ঘোষনা করেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে নিহত সাবেক চেয়ারম্যান শেখর সিকদারের সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে কুড়িয়ানা বাজারের একটি অফিসঘরে, দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ও বর্তমান চেয়ারম্যানের বাড়িতে এবং তার দুই সমর্থকের বাড়িতে ভাংচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ওই এলাকায় স্থানীয় পুলিশের সাথে র্যাব, অতিরিক্ত পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও আনসার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।
বুধবার বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত চেয়ারম্যান শেখর সিকদারের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে কুড়িয়ানার ব্রাক্ষ্মনকাঠিতে নিহতের নিজ বাড়িতে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।