আসাদুজ্জামান খাইরুল, আশুলিয়া (ঢাকা):
তাজরীন গার্মেন্টস
ট্র্যাজেডির আজ দশ বছর। কারখানাটির সামনে নিহতদের স্মরণে স্বজনরা বিচারের দাবিতে দশটি
বছর কাটিয়েছে। আহত শ্রমিকরা বিচারের পাশাপাশি পূর্ণবাসনের দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন ১০
বছর ধরে।
২০১২ সালের
২৪ নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশন গার্মেন্টসে ঘটেছিল ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ড। এ ঘটনায় ১১৭ জন
গার্মেন্টসকর্মী নিহতের পাশাপাশি আহত হয়েছিলেন আরও দুই শতাধিক।
দেশের ইতিহাসে
এ ঘটনা অন্যতম ভয়াবহ ট্র্যাজেডি। ভুক্তভোগীদের দাবি বিচার কার্যক্রম চলছে ধীরগতিতে।
কারণ হিসেবে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে আদালতে সাক্ষী না আসা। বারবার সমন ও গ্রেফতারি পরোয়ানা
জারি করেও সাক্ষীদের আনা যাচ্ছে না আদালতে।
এদিকে দশ বছর
পূর্তি উপলক্ষ্যে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে অবস্থিত, তাজরীন ফ্যাশন গার্মেন্টসের প্রধান
ফটকে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দিনের মর্মান্তিক ও ভয়াবহ কিছু ছবি লাগিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন
করে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি নামের একটি শ্রমিক সংগঠন।
অগ্নিকান্তের
ঘটনায় তৎকালীন ২০১২ সালের ২৫ নভেম্বর আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম
বাদী হয়ে অবহেলাজনিত মৃত্যুর দণ্ডবিধির ৩০৪(ক) ধারায় একটি মামলা করেন।
২০১৩ সালের
২২ ডিসেম্বর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তের করে তাজরীনের মালিক দেলোয়ার
হোসেন সহ ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ১৩ আসামির মধ্যে চারজন
পলাতক এবং বাকি নয়জন জামিনে আছেন।
২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দিলেও সাত বছরের বেশি সময় লেগে যায়, রাষ্ট্রপক্ষের ১০৪ জন সাক্ষীরমধ্যে মাত্র ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণে। বিচার কার্যক্রমের এরকম ধীর অগ্রগতিতে ভুক্তভোগীরা হতাশায় ভুগছে।
আহত ও নিহত
শ্রমিকদের স্বজনদের সংগঠিত করে আন্দোলন করা ও আগুনে পুড়ে আহত শ্রমিক শিল্পী রানী বলেন, আমরা কার কাছে কি বলবো। মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে
পারি না। কথা বলতে গেলে পরে খুঁজে বের করে নানা চাপ দেয়। এ যাবৎ কাল অনেক বলেছি কিন্তু
কোনো প্রতিকার পায়নি। আজ এতোগুলো শ্রমিক মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আমাদের খোঁজ কে রাখে।
আমাদের কোনো দাবি এখনো পূর্ণ হয়নি। সরকারতো পারে আমাদের তাজরীনের ভবনটি আমাদের জন্য
কাজে লাগাতে। কিছু শ্রমিক অন্তত সেখানে থেকে জীবন যাপন করতে পারবে।
দীর্ঘ ১০ বছরে
অগ্নিকাণ্ডে মৃতদের স্বজন ও আহত ব্যক্তিরা জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধন সহ বিভিন্ন
কর্মসূচি পালন করেও বিচার ও দাবি আদায়ে উল্লেখযোগ্য কোন সফলতার মুখ দেখতে পাইনি।
টেক্সটাইল গার্মেন্টস
ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি তপন সাহা বলেন, আজ তাজরিন ফ্যাশন অগ্নিকান্ডের দশ বছর
পূর্ণ হলো। এখনো ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিক ও তার পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
নিহত শ্রমিকদের পরিবার ও আহত শ্রমিকদের আজও পুনর্বাসনে কোন উদ্যোগ নেয়নি সরকার ও বিজিএমইএ
সহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ।
গার্মেন্টস
শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, ২৪ নভেম্বর
আগুন লাগার পর কারখানা কতৃপক্ষ গেটে তালা লাগিয়ে শতাধিক শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা করে।
এছাড়া বিভিন্ন
সময়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাজরিনের প্রায় অর্ধশত শ্রমিক দাবি আদায়ে অনশন করলেও
সরকার ও সংশ্লিষ্টরা কর্ণপাত করছে না। তিনি আরো বলেন পুড়ে যাওয়া ভবনটি সংস্কার করে
শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করারও দাবি জানাই।
বিল্পবী গার্মেন্টস
শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অরবিন্দু বেপারী বিন্দু বলেন, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তোবা
গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেডের ঐকারখানার মালিক দেলোয়ার হোসেনের
সুপরিকল্পিতভাবে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ১১৩ জন শ্রমিককে হত্যা করেছে এবং আহত হয়েছে শতশত শ্রমিক।